সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গ্রেপ্তারের ৪৮ ঘন্টা পরেও এনআইএ-র (NIA) ওয়েবসাইটে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মাওবাদী নেতা (Maoist Leader) সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোর! তাঁর ছবি ও নাম ঝুলছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়। তাঁর প্রোফাইলে জ্বলজ্বল করছে সেই আগের মতই ‘অ্যাবসকন্ডার’ শব্দটি। অর্থাৎ এনআইএ-র ওয়েবসাইট মত মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বেঙ্গল ইনচার্জ সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে বাবু ওরফে কিশোর ওরফে অজয় ওরফে পঙ্কজ এখনও ‘ফেরার’ বা ‘আত্মগোপন’ রয়েছেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে গ্রেপ্তারির (Arrested) খবর আপডেটই হয়নি। আর এতে তদন্তকারীদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই স্পষ্ট হল, তেমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এদিকে সব্যসাচীর মাথার দাম ধার্য করা ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ১০ লক্ষ টাকা কে পাবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই সমস্ত বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ করেনি বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর। তবে তারা যে শীঘ্রই ধৃত মাওবাদী নেতা সব্যসাচীকে জেরা করতে পুরুলিয়া (Purulia) আসছেন, তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির ঝাড়খণ্ড সীমানা বাঘমুন্ডির মাঠা বনাঞ্চলের চাউনিয়া থেকে এই শীর্ষ মাও নেতা গ্রেফতার যেহেতু পুরুলিয়া জেলা পুলিশের সাফল্য। তাই মাথার দাম হিসাবে এনআইএ-র ধার্য করা ১০ লক্ষ টাকা জেলা পুলিশ নাকি রাজ্য পুলিশের নামে দেওয়া হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। নাকি এনআইএ গ্রেপ্তার করেনি বলে তাদের ধার্য করা কোনও অর্থই দেওয়া হবে না। সব্যসাচী পুলিশের জালে ধরা পড়ার দু’দিন পরেও এই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ফের হাসপাতালে মদন মিত্র, কেমন আছেন কামারহাটির বিধায়ক?]
এদিকে শীর্ষ মাও নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই জঙ্গলমহলের (Junglemahal) চার জেলার ২৯ থানায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে রাজ্য পুলিশ। ফলে সতর্কতা রয়েছে ক্যাম্প, পুলিশ ফাঁড়ি, আউটপোস্ট সর্বত্রই। কারণ অতীতে এই জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলনের সময় তাঁদের বড়সড় নেতা পুলিশের জালে আসার পর তারা নাশকতা চালায়। যদিও এখন সেরকম কোনও পরিস্থিতিই নেই বনমহলে। তবুও সতর্ক রাজ্য পুলিশ কোন ঝুঁকি নিতে চায় না। ধৃত সব্যসাচীকে শুক্রবার রাতেই বাঁকুড়ায় নিয়ে গিয়ে জেরা চলে। শনিবার অবশ্য তাঁকে জেরা করতে পুরুলিয়া আসেন রাজ্য পুলিশের আইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) ভরতলাল মিনা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
[আরও পড়ুন: ‘যৌন লালসা নয়, ভালোবাসা’, নাবালিকার ধর্ষণে অভিযুক্তকে জামিন দিল হাই কোর্ট!]
শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ধৃত সব্যসাচীকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। এই ধৃত মাও নেতা এই জেলায় ২০০৩ সালের অক্টোবরে বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়ার জঙ্গলে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বান্দোয়ান থানার তৎকালীন ওসি নীলমাধব দাসের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত। এছাড়া জঙ্গলমহল বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, ও মেদিনীপুরেও তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে নিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চললেও তাত্ত্বিক ওই নেতাকে রীতিমতো ‘অতিথি আপ্যায়ণ’ করছে পুলিশ। তাঁকে জ্যাকেট কিনে দেওয়া হয়েছে, দেওয়া হচ্ছে তাঁর পছন্দের খাবার।