রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: একদিনের ছুটিতে টুক করে হাতের কাছে দিঘা ঘুরে আসার দিন কি শেষ হতে চলেছে? দিঘার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সেই আশঙ্কাই করলেন কলকাতার লেকটাউন থেকে বেড়াতে যাওয়া অভিজিৎ নস্কর। ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, “অনলাইনে বুকিং বন্ধ অথচ এখানে এসে হোটেলের ঘরের জন্য দরদাম। কী লাভ হল? আর ঝোপ বুঝে পর্যটকদের যে কোপ মারা হচ্ছে, বিশ্বাস করুন পকেট ফাঁকা।”
সত্যিই কি তাই? বহরমপুর থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছিলেন শেখ আরাবুল হোসেন। তিনি তো ঘরই পেলেন না। ফলে একবেলা সমুদ্র সৈকতে ঘুরে অগত্যা ফেরার জন্য বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড। বললেন, “অনলাইনে দেখলাম হোটেলে ঘর নেই। বন্ধুরা বলেছিল, চলে যাও পেয়ে যাবে। পেয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু দাম প্রায় পাঁচগুণ বেশি। এত পয়সা দিয়ে থাকা সম্ভব হল না দাদা।” ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও অজানা কারণে দিঘায় বেড়ে যায় হোটেল ভাড়া। তাও দু-পাঁচশো নয়, তিন থেকে দশগুণ বেড়ে যায়। ফলে যাঁরা পারেন, তাঁরা বাড়তি পয়সা দিয়ে হোটেল পান, যাঁরা পারেন না, তাঁদের দিঘায় রাত কাটানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে। মন্দারমণি পর্যটন কেন্দ্র তো দিঘার থেকেও হয়ে ওঠে আরও বেশি দামি। হোটেলের যেই রুমগুলো কয়েকমাস আগে ৩৫০০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেই রুমগুলি এখন ৯০০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে উঠেছে অভিযোগ।
[ আরও পড়ুন: এনআরএসে ডাক্তার নিগ্রহের প্রতিবাদ, বুধবার রাজ্যজুড়ে বন্ধ হাসপাতালের আউটডোর ]
তবে হ্যাঁ, হোটেল ভাড়া তিনগুণ বাড়ালেও হোটেল ব্যবসায়ীরা বুদ্ধি খাটিয়েই বাড়িয়েছেন যাতে ধরা না পড়েন। ৩৫০০ টাকার মধ্যে রাতে ডিনার এবং সকালে ব্রেকফাস্ট ফ্রিতেই দেওয়া হয়েছিল। আর ৯০০০ হাজারে দুপুরে খাওয়ারটা যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্যাকেজ ছাড়া হোটেল বুকিং দেওয়া হচ্ছে না। তাজপুরের অবস্থাও ঠিক একই। তার উপর রয়েছে দালাল রাজ। দালাল রাজেও জেরবার পর্যটন শহর। কিভাবে চলে দালাল রাজ?
দিঘার বেশ কিছু নামি ব্যবসায়ী ভিড়ের সম্ভাবনা অনুমান করে আগে থেকেই হোটেলর ঘর স্বাভাবিক ভাড়ায় বুকিং করে নেয়। ভিড় বাড়লে তা চড়া দামে ভাড়ায় দিয়ে দেওয়া হয়। চারদিনের ভিড়ে মুনাফায় ভরে ওটে পকেট। ফলে শনি ও রবিবারের ছুটিতে দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিস্তর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগে থেকে হোটেল বুক না-করে যাঁরা দিঘায় আসছেন তাঁরা অনেকেই হোটেল ভাড়ার কালোবাজারির দাপটে আর থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। তাই অনেকেই সারাদিন কাটিয়ে রাতের ট্রেনে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁরা থেকে যাচ্ছেন তাঁদের অনেক বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
মেদিনীপুর থেকে দিঘায় বেড়াতে যাওয়া শিক্ষিকা সুমনা কুণ্ডু বললেন, “ঘরের ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা ছিল, সেই ঘরের ভাড়াই হঠাৎ করে ১২০০-১৪০০ টাকা চাইছে।’’ কোথাও আবার তা ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, সৈকত পর্যটনকেন্দ্র দিঘায় অধিকাংশ হোটেল, লজে ভাড়ার তালিকা টাঙানো নেই। তারই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির হোটেল মালিক যেমন খুশি ভাড়া আদায় করছেন। অথচ দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ভাড়ার তালিকা হোটেলের রিসেপশনে টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু তা মানেন না প্রায় কেউই। পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠছে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
[ আরও পড়ুন: ‘খুনি মুখ্যমন্ত্রী’, মুকুলের নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ]
তা হলে সব জেনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা অসাধু হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে? প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটকেরা। তবে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাঁথি মহকুমা প্রশাসন দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক করেছে। যেখানে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শংকরপুর পর্যটন কেন্দ্রের হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের স্পষ্টত হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়। হোটেল ভাড়া স্বাভাবিকের থেকে বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে হোটেলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
The post শিকেয় সমুদ্র দর্শন, দ্বিগুণ ঘরভাড়া দিয়েও হোটেল মিলছে না দিঘায় appeared first on Sangbad Pratidin.