শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ‘স্বপ্নভঙ্গ’ পান্তিপিসির! ত্রিপলের ছাউনিতে মাথা গুঁজে কোনওরকমে দিন কাটাতেন দাসপুরের এই প্রৌঢ়া। ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস শেষ আশ্রয়টুকুও কেড়ে নেয়। খবর পেয়ে তাঁর মাথার ছাদ পাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ সাংসদ দেব (MP Dev)। অভিযোগ, আশ্বাসই সার, আজও তৈরি হয়নি পাকা বাড়ি। এদিকে প্রৌঢ়ার কাঁচাবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে স্থানীয় স্কুলবাড়ির সামনেই দিন কাটছে সোনামুই গ্রামের পান্তিপিসির।
দাসপুরের সোনামুই গ্রামের পান্তিপিসির আসল নাম শিখা চক্রবর্তী। স্বামীকে হারিয়ে বাবার ভিটে জমিতেই মাথা গুঁজেছিলেন তিনি। আয় বলতে কেবল যজমানগিরি ও বিধবা ভাতার মাসিক এক হাজার টাকা। জুন মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে উড়ে গিয়েছিল মাটির বাড়ির ত্রিপলটুকুও।
এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৎপর হন ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী। দীপক অধিকারী ওরফে অভিনেতা সাংসদ দেব তাঁর প্রতিনিধি ঘাটালের তৃণমূল নেতা রামপদ মান্নাকে পাঠিয়ে পান্তিপিসিকে বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর নির্দেশে সেই মাটির বাড়ি ভেঙে দেন পান্তিপিসি। পাকা বাড়ির স্বপ্ন দেখার শুরু সেদিন থেকেই। কিন্তু এখনও সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাতারাতি অ্যাকাউন্টে ঢুকল ১০ কোটি টাকা! আচমকা অর্থপ্রাপ্তিতে আতঙ্কিত যুবক]
রামবাবুর দেওয়া ২০ হাজার টাকায় শুরু হয় বাড়ি তৈরির কাজ। অভিযোগ, কাজ শুরুর পর আর দেখা মেলেনি রামবাবুর। পান্তিদেবীর কথায়, “ঝড়ের সময় রামবাবু দেবের নাম বলে কিছু সাহায্য দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর বাড়ি ভাঙার জন্য প্রথমে ২০ হাজার টাকা ও পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তারপর আর ঘুরেও তাকায়নি। মাঝে বিডিও অফিস থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।”
পান্তিদেবী আরও বলেন, “রামবাবু আমাকে কথা দিয়েছিলেন ছাদওয়ালা পাকা বাড়ি, বাথরুম, রান্নাঘর হবে। তাঁকে বিশ্বাস করে আমি বাড়ির কাজ শুরু করি। বাড়িটি অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। জুন মাস থেকে গোটা বর্ষা স্কুলের দুয়ারে কাটিয়েছি। শীত পড়েছে। এই শীতের সময় আমি কী করে কাটাব বলুন?” প্রৌঢ়া হাপিত্যেশ করে আরও বলেন, “আমার মাটির বাড়িই তো ভাল ছিল। তাঁকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি। দেবের সঙ্গে তো দেখা করতে পারব না। আমি শুনেছি, দেব রামবাবুকে টাকা দিয়ে দিয়েছেন। দেব খুব ভাল লোক। রামবাবুই টাকা দিচ্ছেন না। যোগাযোগও করছেন না।”
[আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে একই হাসপাতালে বছরের পর বছর! ৬ হাজার চিকিৎসককে বদলির সিদ্ধান্ত রাজ্যের]
পান্তিপিসির এখন ঠাঁই গ্রামের দোতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচুতলার মেঝে। পান্তিপিসির এই দুর্দশা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। প্রতিবেশী অসীম চক্রবর্তী বলেন, “শুনেছি, সাংসদ দেব খুব ভাল লোক। কিন্তু এই কি তার নমুনা? এখন এই শীতের রাতে পান্তিদি থাকবে কোথায়? আমরা চাই দেব বাড়িটি দ্রুত তৈরি করে দিন।” এ বিষয়ে রামপদবাবু বলেন, “কথা যখন দিয়েছি, বাড়ি নিশ্চয়ই তৈরি করে দেওয়া হবে। আমি নিজে গিয়ে পান্তিপিসির সঙ্গে কথা বলব।”