shono
Advertisement

‘দূর হোক করোনা’, মহামারী আবহেও একই আয়োজনে পুজো হবে মালদহের এই বনেদি পরিবারে

জানেন ৩৫০ বছরের পুরনো এই পরিবারের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যের কথা?
Posted: 09:51 PM Oct 04, 2020Updated: 09:51 PM Oct 04, 2020

বাবুল হক, মালদহ: করোনা (Coronavirus) আবহে দুর্গাপুজোর আড়ম্বরে যেখানে কাটছাঁটই নিউ নর্মালের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ব্যতিক্রম কিন্তু মালদহের (Maldah) আদি কংসবণিক পরিবারের পুজো। সেখানে কোনও কাটছাঁট হবে না, রীতি মেনেই পুজো হবে। তবে সামান্য বদল বা সংযোজন-বিয়োজন থাকবেই। একেবারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। নতুন সংযোজন বলতে একটাই। করজোড়ে প্রার্থনা, দেশ থেকে যেন দূর হয় করোনার অভিশাপ। এই সংকল্প নিয়ে দেবী দুর্গার কাছে একযোগে মানত করবেন ২৩৬টি পরিবার।

Advertisement

এ বছর মালদহের আদি কংসবণিক পরিবারের পুজো নিয়মনিষ্ঠা মেনে সাদামাটা ভাবেই হবে। দেবী মায়ের কাছে করোনা মহামারী দূর করার সংকল্প নিয়ে হাজির হবেন পরিবারের সদস্যরা। পদ্মফুল এবং ভোগ নিবেদনের মাধ্যমে মানত করা হবে। মালদহ শহরের এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। এখানে থিমের চমক নয়, নিষ্ঠা আর ভক্তি মাতৃ আরাধনার মূল ঐতিহ্য। যা আজও অটুট রয়েছে মালদহ শহরের দুর্গাবাড়ি মোড় এলাকার আদি কংসবণিক পরিবারের পুজোয়। এ বছরকরোনা আবহে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে পুজোয় অংশগ্রহণকারীদের।

[আরও পড়ুন: এবার ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারবেন দুর্গাপুজোর বিশেষ মুহূর্ত, জানেন কীভাবে?]

ইংরেজ বাজার শহর ঘেঁষেই বয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদী। প্রায় ৩৫০ বছর আগে মহানন্দা নদীর নিমতলা ঘাটে পাওয়া গিয়েছিল মা দুর্গার চণ্ডী রূপের একটি পাথরের মূর্তি। এক বৃদ্ধা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তিটি মহানন্দা নদী থেকে সংগ্রহ করে নিমতলা ঘাটে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো (Durga Puja)। পরে সেই বৃদ্ধা প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর শহরের জমিদার গিরিজানন্দ দাসের পরিবার মায়ের সেই পুজোর দায়িত্ব নিয়ে পাথরের মূর্তিটি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারপর থেকে জমিদার বাড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে পুজো হয়। সেই জমিদারের প্রয়াণের পর তাঁর পরিবার পুজোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল মালদহ শহরের আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যদের হাতে। শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে অতীতের সেই বৈদিক পৌরাণিক প্রথা মেনে ফি বছরই হয়ে আসছে আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গাপুজো। এই কাহিনি শোনালেন পুজো কমিটির সভাপতি নিমাই দত্ত।

পুজোর ঘট ভরতি করতে এক সাজে হেঁটে মহানন্দা নদীর সেই নিমতলা ঘাটে যান আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যরা। পায়ে হেঁটে প্রায় আধ কিলোমিটার পথ। নিমতলা ঘাট থেকেই মহানন্দার জল তুলে এনে পুজোর ঘট ভরার রেওয়াজ অব্যাহত রয়েছে। করোনা আবহে এবারও তা হবে, তবে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গা পুজোয় কখনও কোনও থিমের চমক থাকে না। ঐতিহ্যের মধ্য দিয়েই সাড়ে তিনশো বছর আগের সেই ইতিহাসের গন্ধ খুঁজে পান শহরবাসী। মালদহ শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে আদি কংসবণিক পরিবারের একটি দুর্গা মন্দির রয়েছে। প্রায় ১৫২ বছর আগে সেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন সেই নিজস্ব মন্দির গৃহেই মায়ের পুজো হচ্ছে। মন্দিরেই স্থাপিত রয়েছে মহানন্দা নদী থেকে পাওয়া পাথরের সেই প্রাচীন চণ্ডীমূর্তি।
এখানে পূজিত হন মৃন্ময়ী সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা। পুজোর দিনগুলিতে চলে নিয়মিত চণ্ডীপাঠ। পুজোর দিনগুলিতে কংসবণিক পরিবারের সকলেই দুর্গা মন্দিরে থাকেন। এখন দুর্গাবাড়ি মন্দিরে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। আগমনির শোভাযাত্রায় এবার কাটছাঁট হতে পারে।

[আরও পড়ুন: করোনা কালে বেলুড় মঠে দুর্গাদর্শনের রীতি বদল, নিজস্ব ওয়েবসাইটে পুজোর সম্প্রচার]

পুজো কমিটির সভাপতি নিমাইবাবু বলেন, “কংসবণিক সম্প্রদায়ের ২৩৬টি পরিবার এই পুজোর আয়োজন করে থাকে৷ এই পুজোতে কোনও চাঁদা সংগ্রহ করা হয় না৷ পুজোর ৪ দিন অসংখ্য মানুষ মন্দিরে আসেন৷ এই পুজো না দেখলে বোধহয় সবারই পুজো দর্শন অপূর্ণ থেকে যায়৷ তবে এবারে এই সম্প্রদায়ের সমস্ত পরিবার একযোগে মায়ের কাছে সংকল্প করতে চলেছি, দেশ থেকে যেন দূর হয় এই করোনা।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement