shono
Advertisement

তিন বছরে বাংলায় লেখা হয়নি একটিও চিঠি! পোস্টকার্ড এখন অতীত

পোস্ট অফিসে এলেও পড়ে থাকে পোস্টকার্ডগুলো।
Posted: 10:26 AM Jan 02, 2024Updated: 10:31 AM Jan 02, 2024

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কত চিঠি লেখে লোকে…।’ না। আর কেউ চিঠি লেখে না! আবেগ আছে। আছে স্মৃতি। প্রেমও আছে। পরিজন বিয়োগে মন পাথর হয়। কিন্তু পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটার মনের সেই অভিব্যক্তি, আবেগ আর বহন করে না! বঙ্গজীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে হলুদ পোস্ট কার্ড। হারিয়ে গিয়েছে ইনল্যান্ড লেটার। গত তিন বছরে অন্তত একটিও ব্যক্তিগত পোস্ট কার্ড কোনও পোস্ট অফিস থেকে কারও বাড়ি যায়নি। যায়নি কোনও লেফাফা, ইনল্যান্ড লেটার। এমনই বলছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোস্টাল সার্কেল।

Advertisement

একযুগ আগেও বছরে অন্তত একটি পোস্ট কার্ড (Post Card) বাঙালির বাড়িতে আসত। ‘শুভ বিজয়ার আশীর্বাদ-সহ অমুক’, উত্তর যেত ‘ভাল থাকবেন। প্রণাম নেবেন আপনার অমুক’। পরিজন বিয়ে অথবা বাড়িতে নতুন অতিথি এলে চিঠি দেওয়া হত। হলুদ আর সিঁদুর টিপ দেওয়া বিয়ের নেমন্তন্নর পোস্ট কার্ডও গ্রামবাংলার বাড়িতে আসত। ক্রমশ সেই রেওয়াজও কমতে শুরু করে। আর গত তিন বছরে রাজ্যের একটি বাড়িতে কোনও আত্মীয়পরিজন, বন্ধুবান্ধব কেউ একটি চিঠি পায়নি। কেউ চিঠি লেখেনি!

[আরও পড়ুন: বছরের দ্বিতীয় দিনে ফিরল শীতের আমেজ, ভিজতে পারে ৫ জেলা]

কেউ চিঠি লেখে না। প্রাবন্ধিক ড. পবিত্র সরকার একটু অন্যভাবে বলেছেন, ‘‘হায় চিঠি, তোমার দিন গিয়াছে! তুমি আর কারও দূত হয়ে কোনও বাড়িতে যাও না। তোমার বুকে লেখা শব্দগুলো কারও চোখে জল আনে না অথবা কেউ হেসে গড়িয়ে পড়ে না।’’ যদিও এখনও এই বাংলায় অপু আছে, আছে সর্বজয়া , দুগ্গা আর হরিহর মুখুজ্জের মতো হাজারো জীবন। কিন্তু তাঁদের জীবনে চর্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট, মোবাইল আর হোয়াটসঅ‌্যাপ। পবিত্রবাবুর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র তো ক্লাসিক। অমন লেখা আদৌ আর হবে কি না সেটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অধ্যাপক শিশিরকুমার দাস, শঙ্খ ঘোষ কিংবা অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তো অনেক চিঠি লিখেছেন। লেখার গুণেই সেগুলো সাহিত্যগুণসম্পন্ন।’’ প্রাক্তন অধ্যাপকের স্বগতোক্তি, ‘‘গ্রামের ডাকঘরে চিঠি কি বিক্রি হয় না?’’ নইলে গ্রামের মানুষও সম্ভবত মোবাইল সর্বস্ব হয়ে গিয়েছেন?’’ একই সঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘বয়সের ভারে আমিও এখন আর চিঠি লিখতে পারি না।’’

ঠিক এই জায়গাতেই প্রশ্ন তুলেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের পোস্ট মাস্টার জেনারেল নীরজ কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘সভ্যতার বিকাশে চিঠির অবদান অনস্বীকার্য। দেড় পাতার মোটা হলুদ পোস্ট কার্ড অথবা ইনল্যান্ড লেটার চিন্তা করতে শেখায়। ভাবতে শেখায় কতটা লেখা উচিত, আর কোথায় থামতে হবে? মোবাইলে সেই সুযোগ কোথায়?’’ নীরজ কুমার জানিয়েছেন, চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা শুরু হবে রাজ্যে। স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে অভ্যাস গড়ে তুলতেই এই পদক্ষেপ। ঐতিহ্যকে হারানো যাবে না। পোস্টাল সার্কেলের সহকারী অধিকর্তা (মেল) তুষারকান্তি চৌধুরির কথায়, ‘‘ভাবতে কষ্ট হয় এই প্রজন্ম বুঝতেই পারল না প্রিয়জনের চিঠি পেতে দেরি হলে কতটা উদ্বেগ হয়? অথবা চিঠি না পাওয়ার কষ্ট। একটা মুখ বন্ধ খামের চিঠি কেমনভাবে এক আকাশকে হাতের নাগালে এনে দেয়? চিঠি আমার কাছে নস্টালজিক।’’ তবু নিয়ম করে ফি বছর পোস্ট কার্ড আর ইনল্যান্ড লেটার বিলি হয় রাজ্যের সব পোস্ট অফিসে। কিন্তু সেগুলো বাণিজ্যিক কাজ অথবা অফিস-কাছারিতে ব্যবহার হয়। তুষারবাবু জানিয়েছেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন নতুন বছরে ভক্তদের জন্য চিঠি পাঠায় নিয়ম করে। বাকিটা বাণিজ্যিক ব্যবহারে। ব্যস। এই পর্যন্তই!’’

[আরও পড়ুন: স্বামী পরিত্যক্তা কত? খোঁজ নিচ্ছে কোর্ট, তলব বিধাননগর পুলিশের কমিশনারকে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার