সৈকত মাইতি, তমলুক: ঘৃণাভাষণে উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নামে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করল পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জাতিগত উস্কানিমূলক মন্তব্য ও সামাজিক স্থিতি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে একটি কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে শুভেন্দু ‘হিন্দুদের শেষ আশ্রয়স্থল ভারতবর্ষ’-র মতো একাধিক মন্তব্য করেন। ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন কাঁথির বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু সোহেল। তার ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট মামলা রুজু করেছে পুলিশ। হিংসার রাজনীতি করে শুভেন্দু অশান্তি বাঁধাতে চাইছেন বলে তোপ দেগেছে তৃণমূলও।
রবিবার এই অভিযোগ ও পুলিশের মামলা রুজুর বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ অক্টোবর নন্দকুমারের কামারদা এলাকার একটি কালীপুজোর মণ্ডপের উদ্বোধনে অংশ নেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সেখানেই মঞ্চ থেকে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘হিন্দুদের শেষ আশ্রয়স্থল হল ভারতবর্ষ। এটা রাজনীতির কথা নয়, ভোটের কথা নয়, হিন্দুদের কথা। তাই এখানে যদি হিন্দুত্বকে আপনারা রক্ষা করতে না পারেন তাহলে যাওয়ার আর কোনও রাস্তা নেই।’’
[আরও পড়ুন: ছটপুজোতেও আসানসোলে সরগরম রাজনীতি, ‘নিখোঁজ’ পোস্টার নিয়ে বাকযুদ্ধ শত্রুঘ্ন-অগ্নিমিত্রার]
তিনি আরও বলেন, ‘‘ইসলামিক ফ্রন্ট হিসাবে একদিকে বাংলাদেশ, একদিকে পাকিস্তান, আর একদিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। কয়েকদিন আগেই আমাদের হিন্দুদের মারধর করা হয়েছে মোমিনপুরে। কলকাতার খিদিরপুরে লক্ষ্মীপুজোর দিনও অশান্তি বাঁধিয়ে ১০০ ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে একজন মৃৎশিল্পী ২০টা ঠাকুর তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে ১৬টা ঠাকুর ভাঙচুর করেছে।’’
এরপরই শুভেন্দুর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ই-মেলে অভিযোগ জানান সুপ্রিম কোর্টের ওই আইনজীবী। গত ২৭ তারিখ অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তার ভিত্তিতেই নন্দকুমার থানায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। এক্ষেত্রে কালীপুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতি ও ধর্মগত বিভেদ তৈরি করে উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে শুভেন্দুকে বিঁধেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী লাগাতার কুরুচিপূর্ণ উসকানিমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আসলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছেন না শুভেন্দু।
তাই উসকানিমূলক মন্তব্য করে অশান্তি বাধাতে চাইছেন। শুভেন্দু হিংসার মনোভাব থেকে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। হিংসার রাজনীতি করার মনোভাব ওর।’’ একইসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘আসলে দিলীপ, শুভেন্দু, সুকান্ত প্রত্যেকেই কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কে কত বড় নেতা দেখানোর চেষ্টা করছেন।’’ অন্যদিকে, নন্দকুমার থানার পুলিশ আধিকারিক মনোজকুমার ঝার বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে।’’ তবে এ নিয়ে আর শুভেন্দুবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও জবাব মেলেনি। তবে বিজেপির জাতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এইরকম মামলা এর আগেও অনেকবার হয়েছে। এই ধরনের মামলায় তিনি (শুভেন্দু) আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।’’