সুব্রত বিশ্বাস: আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে নন সুবার্বন ট্রেন (Train services)। শুক্রবার শিশির মঞ্চে রাজ্য-রেলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লোকাল ট্রেন ১১ নভেম্বর থেকে চালু হওয়ার পর দূরের জেলাগুলি থেকে ট্রেন চালানোর আবেদন আসছিল। সঙ্গে চলছিল আন্দোলনে নামার হুমকি। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের দাবি জোরাল হচ্ছিল।
[আরও পড়ুন: ‘যা করেছেন, ঠিক করেছেন’, শুভেন্দুকে সমর্থন করে জল্পনা বাড়ালেন আরেক তৃণমূল বিধায়ক]
শুক্রবার মুখ্যসচিব, পরিবহণ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রেল পুলিশের ডিজি, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের সিওএম, ডিআরএম-সহ একাধিক আধিকারিকের উপস্থিতিতে ঠিক হয়, আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে দূরের জেলাগুলোর মধ্যে যোগাযোগকারী ট্রেনগুলি চালু হবে। পূর্ব রেলের চিফ অপারেশন ম্যানেজার এস কে বল বলেন, বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ, আসানসোল-বর্ধমান, আসানসোল-জসিডি, আন্ডাল-সাইথিয়া, মালদহ-সাহেবগঞ্জ সহ প্রতিটি নন সুবার্বন শাখায় ট্রেন চলবে। প্রাথমিকভাবে ২৭ জোড়া ট্রেন চলবে। পরে তা বাড়ানো হবে।
জানা গিয়েছে, ২৭ জোড়া নন সুবার্বন ১৫ জোড়া হাওড়া ডিভিশনে, ১১ জোড়া আসানসোল ডিভিশনে ও একজোড়া মালদহ ডিভিশনে। হাওড়া ডিভিশনে ১৫ জোড়ার মধ্যে চার জোড়া চলবে বর্ধমান-রামপুরহাটের মধ্যে। চার জোড়া রামপুরহাট-গুমানি, চার জোড়া কাটোয়া-আজিমগঞ্জ, এক জোড়া রামপুরহাট-জসিডি, দু জোড়া আজিমগঞ্জ-রামপুরহাটের মধ্যে। ১১ জোড়া আসানসোল ডিভিশনে চলবে। যার মধ্যে চার জোড়া বর্ধমান-আসানসোলের মধ্যে, দু জোড়া আন্ডাল-সাইথিয়া, দু জোড়া আসানসোল-ধানবাদ, দু’জোড়া আসানসোল-ঝাঁঝার মধ্যে, এছাড়া একজোড়া আন্ডাল-জসিডির মাঝে। মালদহ ডিভিশনে মালদহ থেকে বারহারওয়ার মাঝে একজোড়া ট্রেন চলবে।
পূর্ব রেল ২ তারিখ থেকে ট্রেন চালালেও দক্ষিণ পূর্ব রেল জানিয়েছে, ওইদিন থেকে তারা ট্রেন চালাতে পারবে না। ওই রেলের সিপিটিএম আশীষ ভাটিয়া জানিয়েছেন, খড়গপুর-আদ্রা, খড়গপুর-টাটা, খড়গপুর-দিঘা, খড়গপুর-বেলদা নন সুবার্বন শাখায় ট্রেন চলবে। প্রথমে সাত জোড়া ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ২ ডিসেম্বর থেকে সম্ভব নয়, রেক লিংক তৈরি, রেলবোর্ডের অনুমতি নিতে একটু সময় লাগবে। নির্ধারিত দিন পরে জানানো হবে।
বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমানের একাংশের মানুষজন চরম অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বীরভূম জেলা কংগ্রেস অবিলম্বে ট্রেন না চললে যা মেল এক্সপ্রেস ওই লাইনে চলছে তা স্তব্ধ করে দেবার হুমকি দিয়েছে। জেলার প্রতিটি স্টেশন কর্তৃপক্ষকে তারা স্মারকলিপি দেয়। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ, আহমেদপুর-কাটোয়া, রামপুরহাট-অনিমগঞ্জ, রামপুরহাট-দুমকা, রামপুরহাট-অন্ডাল শাখায় লকডাউন থেকে ট্রেন চলছেনা। রোগী থেকে পড়ুয়া, চাকরিজীবী, কৃষক, কুমোররা প্রত্যেকে ট্রেনের অভাবে চরম অসুবিধার পাশাপাশি রুটি-রুজিহীন হয়ে পড়েছেন।
স্তব্ধ রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেলের নন সুবার্বন ট্রেন এখনও চালু না হওয়ায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুরের লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। শুক্রবার সুবার্বনের ট্রেনগুলি চালানোর সিদ্ধান্ত হয় রেল-রাজ্য দু তরফের বৈঠকে। আলোচনার পর্যায়ে থাকলেও ট্রেন চালুর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেনি ওই রেল। রেল বোর্ডের অনুমতি ও লিংক তৈরিতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে।
রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া বলেছিলেন, দু সপ্তাহ আগে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জিএমকে লিখিতভাবে জানিয়েছি, মানুষের দুর্দশার কথা ভেবে নন সুবার্বন ট্রেন চালু করা হোক। অদ্রার ডিআরএমকেও তিনি একই কথা জানিয়েছেন। বাসুদেববাবু বলেন, আদ্রা-আসানসোল, আদ্রা-পুরুলিয়া, আদ্রা-খড়গপুর শাখায় ট্রেন না চলায় লক্ষ লক্ষ জনজীবন বিপর্যস্ত। সব খুলে গেছে। অফিস কর্মী, টিউশনি পড়তে যাওয়া পড়ুয়া, ব্যবসায়ী, চাষী সবাই চরম অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। পুরুলিয়া থেকে কলকাতা যাওয়ার ট্রেন নেই। ফলে অসুস্থ মানুষদের নিয়ে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়ছে পরিবার। গরিব, শ্রমজীবী মানুষের নির্ভরযোগ্য পরিবহণ ট্রেনই। ফলে ট্রেন বা চললে সীমাহীন দুর্গতি। পাশাপাশি পুরুলিয়া-ভেল্লুপুরম বাই উইকলি ট্রেনটি বন্ধ থাকায় ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যেতে পারছেন না রোগীরা। এই ট্রেনটি চালানোর দাবি তুলেছেন তিনি।