সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাতসকালে ফের পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ৷ জানুয়ারির হাইড্রোজেন বোমার পর ফের বৃহস্পতিবার৷ সঙ্গে হুঁশিয়ারি পরমাণু যুদ্ধের৷ রেজাল্ট ভূমিকম্প!
এটি উত্তর কোরিয়ার পঞ্চম পারমাণবিক পরীক্ষা বলে দাবি করেছে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া৷ শুক্রবার সকালে উত্তর কোরিয়ার কিলজু কাউন্টি শহরের পুঙ্গেরিতে এই পরমাণু পরীক্ষা চালানো হয়৷ এর আগে ওই একই জায়গায় চারটি পরমাণু পরীক্ষা চালানো হয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর সময় ‘কৃত্রিম’ ভূমিকম্প অনুভূত হয়৷ রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.৩৷ রাষ্ট্রসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একের পর এক পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ প্রধান রাজনৈতিক নেতা কিম জং উনের নির্দেশেই এই একের পর এক পরমাণু পরীক্ষা৷ এর আগে গত জানুয়ারিতে শেষবার পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল৷
৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়ার জাতীয় দিবস৷ বেশ কিছুদিন ধরেই কিম জং হুংকারের সুরে বলে আসছিলেন, এই দিনটিতে বিশেষ চমক থাকবে৷ জাতীয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসাবে এই পরমাণু পরীক্ষা বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল৷ এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাকে হেলায় উপেক্ষা করেছেন ‘পাগলা শাসক’ কিম জং৷ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসনের দাবি, মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে যে ভূমিকম্পের রিপোর্ট দিয়েছে তা আসলে এই পরমাণু পরীক্ষার ফল৷ সিওলের আবহাওয়া দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, এটাই উত্তর কোরিয়ার ঘটানো সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিস্ফোরণ৷ যার জেরে নকল ভূমিকম্প হয়েছে৷ এটা একটা পরমাণু পরীক্ষার ফল৷ আর একটি সরকারি সংস্থার দাবি, ভূমিকম্পের স্থান ও তীব্রতার নিরিখে বলা যায়, এটা একটা পরমাণু বোমা পরীক্ষারই ফল৷ জাপানের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, এটা পরমাণু পরীক্ষা বলে প্রমাণিত হলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ জানানো হবে৷
পরমাণু পরীক্ষার সাফল্যে খুশি দেশের ‘স্বৈরাচারী’ নেতা কিম জং উন৷ আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়াকে চাপে ফেলতে তাঁর নির্দেশেই হয়েছে পরমাণু পরীক্ষা৷ এবার যে কোনও সময় যুদ্ধবাজ শাসক কিম আমেরিকার উপর পরমাণু আঘাত হানতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সেই কারণেই হাইড্রোজেন বোমা শক্তিধর দেশের তালিকায় উত্তর কোরিয়ার নাম উঠতেই উদ্বেগে আমেরিকা৷ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম অমান্য করে পরমাণু পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে আমেরিকা, জাপান, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া৷ উত্তর কোরিয়াকে এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন৷ এরপরই নতুন করে যুদ্ধের দামামা বাজার প্রহর গুনতে শুরু করল সারা বিশ্ব৷ পরমাণু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মাটির তলায় বোমা বিস্ফোরণের জেরে বড়রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত৷ কম্পন আরও তীব্র হলে ভূমিকম্পের পাশাপাশি জাপান সাগরে সুনামি হতে পারত৷ এর আগে পুঙ্গেরিতে চারবার পরমাণু পরীক্ষা করেছে পিয়ংইয়ং৷ পরমাণু শক্তিধর হয়ে আমেরিকার সমতুল্য হতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন কিম৷ কিমের মতো উত শাসক এবার পরমাণু বোমার ব্যবহার কীভাবে করবেন তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে তাবড় রাষ্ট্রনেতারা৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী এদিন উত্তর কোরিয়ার পরমাণু শক্তিধর হওয়াকে বিশ্বের কাছে ‘বিপজ্জনক হুমকি’ বলে মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর মতে, “রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম লঙ্ঘন করে এই পরীক্ষা করা হয়েছে৷ পরমাণু শক্তি ব্যবহার না করার উদ্যোগকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাল উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ৷”
এদিন উত্তর কোরিয়ার তরফে পরমাণু পরীক্ষার কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা না হলেও দাবি করা হয়েছে, “আমরা এখন পরমাণু শক্তিধর দেশ৷ আমাদের হাতে হাইড্রোজেন বোমাও রয়েছে৷” হাইড্রোজেন বা থার্মোনিউক্লিয়ার যন্ত্রটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম৷ উত্তর কোরিয়া প্রশাসনের একটি পক্ষ আরও জানিয়েছে, “এই অত্যাধুনিক পরমাণু পরীক্ষা পুরোপুরি নিজস্ব পরীক্ষা, গবেষণা ও কর্মীদের দক্ষতার জন্য সফল হয়েছে৷”
একের পর এক সফল পরমাণু পরীক্ষায় মার্কিন বিরোধী উত্তর কোরিয়ার জনগণ অত্যন্ত খুশি৷ পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধ চলছে পিয়ংইয়ংয়ের৷ এদিন মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “এবার কিম জং উন বিশ্বকে ধবংস করার জন্য আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলেন৷ যথেষ্ট উন্নতমানের একাধিক বোমা বানানো হয়েছে৷ এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত৷”
গত জানুয়ারিতেই কিম বলেছিলেন, “আমাদের দেশ এখন শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্রধর৷ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে অ্যাটম বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা রয়েছে৷” শাসনকালের শুরু থেকেই যুদ্ধবাজ হিসাবে পরিচিত একগুঁয়ে শাসক তথা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা স্বৈরাচারী কিম৷ দ্বীপের দখল ও ভৌগোলিক সীমারেখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিবাদ চলছে উত্তর কোরিয়ার৷ প্রায়ই কিম সিওলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দেন৷ অস্ট্রেলিয়া সরকারও পিয়ংইয়ংয়ের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে৷ উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধের হুমকি আন্তর্জাতিক শান্তি বিঘ্নিত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া৷
পুঙ্গেরি সংলগ্ন জনমানবহীন এলাকায় এদিন ভূমিকম্প ঘটায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি হলে খবর৷ কিন্তু কম্পনের তীব্রতা দেখে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০১১ সালে সুনামির জেরে জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পরমাণু কেন্দ্রে যেমন ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছিল তেমন বড়রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে উত্তর কোরিয়া ও তার সংলগ্ন দেশেও৷
২০০৬ সালে প্রথম পরমাণু পরীক্ষার পর থেকেই রাষ্ট্রসংঘ উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷ কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাকে কোনও পাত্তাই দেয়নি কিম প্রশাসন৷ উল্টে চিনে যখন সোমবার জি-২০ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা, তখন পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি মিসাইল ছুড়ে আন্তর্জাতিক মহলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন স্বৈরশাসক কিম জং৷ সেদিনই হুংকার ছেড়েছিলেন, আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে বলে৷ পঞ্চমবার এই পরমাণু পরীক্ষায় রুষ্ট বারাক ওবামাও জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে হোয়াইট হাউস৷ এখন হোয়াইট হাউস কী পদক্ষেপ করে সেটাই দেখার৷
The post কিমের পরমাণু বোমা পরীক্ষায় কপালে ভাঁজ আমেরিকার appeared first on Sangbad Pratidin.