অভিরূপ দাস: হাজার ওয়াটের আলোর রোশনাই ধরা দেয় না ওঁদের চোখে। শরতের শহরের ঝলমলে রাস্তার সঙ্গে আর পাঁচটা দিনের সাদামাটা সড়কের কোনও তফাৎ করতে পারে না ফ্যাকাশে চোখের মণি। দৃষ্টিই যে নেই। তবু তাঁদেরও তো উৎসবে শামিল হওয়ার ইচ্ছে হয়। বাঁশ,কাঠের সূক্ষ্ম কারুকার্য অনুভব করতে সাধ জাগে।
দৃষ্টিহীনদের জন্য সে ব্যবস্থাই করছে ‘প্রেরণা অডিও লাইব্রেরি।’ উত্তর চব্বিশ পরগনার গুমার এই পাঠাগার চালান দৃষ্টিহীন শিক্ষক তারক চন্দ্র। জন্ম থেকেই দেখতে পান না তিনি। দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) বন্ধুরা যখন দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে, ঘরবন্দি তারকের সঙ্গী ছিল মনখারাপ। সেই থেকেই অদম্য জেদ ছিল দৃষ্টিহীনদের জন্য কিছু একটা করবেন। সেখান থেকেই শুরু লড়াই। নিজে যেমন স্কুল শিক্ষক হয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তেমনই শুরু করেছেন একটি লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে এবার দুর্গাপুজো নামে একটি আলাদা বিভাগ তৈরি হচ্ছে। তারকের কথায়, ‘সাধারণ টিভিতে যেমন পুজো পরিক্রমা হয় এটা তেমনই। তবে প্যান্ডেলের বর্ণনা আরও বিস্তারিত ভাবে থাকবে। একটা সুইচে ক্লিক করে কান দিয়ে সে বর্ণনা শুনতে পারবেন দৃষ্টিহীনরা।’
“শুনতে শুনতে তাদের মনে হবে যেন মণ্ডপ প্রবেশ করেছেন।” নামজাদা পুজো কমিটির সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতিমাশিল্পী কে? কী তাদের থিম? মণ্ডপ তৈরিতে কী কী কাঁচামাল ব্যবহার হয়েছে সেই সব তথ্য নেওয়া হবে। সেগুলোই থাকবে প্রেরণা লাইব্রেরির www.voiceofbooks.org ওয়েবসাইটে। যেখানে ক্লিক করলেই কান দিয়ে ঠাকুর দেখতে পারবেন দৃষ্টিহীনরা। কান দিয়ে শুনে শুনেই ঘোরা হয়ে যাবে উত্তরের হাতিবাগান, মধ্য কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে দক্ষিণের নাকতলা।
[আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাসপেনশনের মেয়াদবৃদ্ধি, ছাঁটাই সময়ের অপেক্ষা?]
প্রেরণা অডিও লাইব্রেরির মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এলাকার অগুনতি দৃষ্টিহীন। উত্তর ২৪ পরগনার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাকে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে চান তারক। সে কারণেই ওয়েবসাইট লঞ্চ। আর পাঁচজনের মতো বই পড়তে পারেন না তাঁরা। এদিকে দৃষ্টিহীনদের ব্রেল বই রাখতে বিপুল জায়গার প্রয়োজন। লাইব্রেরিতে প্রতিটি বিষয়ের ব্রেল বুক রাখা কার্যত অসম্ভব। সেই চিন্তা থেকেই ওয়েবসাইটের উদ্বোধন। ঠিক হয় ওয়েবসাইটে গোন শোনার মতো করে অডিও বুক আপলোড করা হবে। অশোকনগরের গুমায় এই মুহূর্তে প্রায় তিনশো বই রয়েছে। ধীরে ধীরে সেগুলো ওয়েবসাইটে তোলা হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিহীনরাও সেই ওয়েব সাইটে গিয়ে পড়াশোনা করছেন। কী কী বিষয়ের বই রয়েছে? তারকবাবু জানিয়েছেন, ইতিহাস, পলিটিক্যাল সায়েন্স, বাংলা ছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই টেস্ট পেপারও আপলোড করা হচ্ছে ওয়েবসাইটে।