অভিরূপ দাস: স্তনে ফোলা ভাব। খেয়াল করেননি। যখন জানলেন ওটা ক্যানসার বহু দেরি হয়ে গিয়েছে। এবার আর তেমনটা হওয়ার জো নেই। বাড়িতে গিয়ে স্তন পরীক্ষা করবেন আশাকর্মীরা। সন্দেহজনক হলেই জেলার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লিনিকে নেওয়া হবে সন্দেহভাজনকে। বাংলায় এবার দুয়ারে ক্যানসার নির্ণয়।
সাধারণত স্তনে ক্যানসার হলে, ক্যানসার কোষের উপস্থিতির ফলে স্তনে লালচে এবং ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। যা স্তনের রং পরিবর্তন করে। অথচ প্রায়শই এই বদল নজর এড়িয়ে যায়। বগলের আশপাশে পিণ্ড দেখা দিলেও তা ঠাওর করতে পারেন না অনেকেই। এবার সে সব দেখবেন আশাকর্মীরা। তাঁদের এই পরীক্ষার কাজে পারদর্শী করতে ‘ক্লিনিকাল ব্রেস্ট এগজামিনেশন’ শেখানো শুরু হল বৃহস্পতিবার। একইভাবে জেলা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লিনিকের সিএইচওকে এক্সটেনসিভ ক্লিনিকাল ব্রেস্ট এগজামিনেশন টেকনিক শেখানো হবে। কারণ স্তনে সন্দেহজনক কিছু দেখলেই রোগীকে নিয়ে আসা হবে জেলা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লিনিকে। এরপর রোগী যাবে মহকুমা কিংবা সদর হাসপাতালে। সেখানেই মিলবে চিকিৎসা। অর্থাৎ জেলা থেকে আর শহরে নয়। প্রত্যন্ত গ্রামেই মিলবে ক্যানসারের চিকিৎসা।
[আরও পড়ুন: নেশার ঘোরে বেসামাল, ইনস্টাগ্রামে ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেল যুবক]
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শুধু স্তন ক্যানসার নয়, ন্যাশনাল নন—কমিউনিকেবল ডিজিজ-এর অধীনে গ্রামে গ্রামে ছ’টি রোগের চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবিটিস, উচ্চরক্তচাপ, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাও। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, বাড়িতে বাড়িতে যে আশাকর্মীরা যাবেন তাঁদের হাতে থাকবে স্কোরশিট। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা অসুখের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’গুলো যাচাই করবেন। ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের জিজ্ঞেস করবেন ব্লাড সুগার আছে কিনা। মুখে কোনওরকম ঘা রয়েছে কিনা। ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, নতুন এই ব্যবস্থার ফলে শুধুমাত্র যে মেডিক্যাল কলেজে রোগীর চাপ কমবে তাই নয়, দ্রুত ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে বাংলায় ক্যানসারে মৃত্যুও ঠেকানো যাবে সহজে।
এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, জেলা হাসপাতালেই ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হবে। জেলা হাসপাতালগুলির তিনজন সার্জন, দু’জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে একদিন করে ব্রেস্ট ক্লিনিক চালাবেন। তাঁদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তাঁরাই করবেন রোগীর বায়োপসি। তিরিশ ঊর্ধ্ব প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ মহিলা রয়েছেন বাংলায়। এঁদেরই স্তন পরীক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতি জেলায় গড়ে দু’হাজার থেকে আড়াই হাজার আশাকর্মী রয়েছেন। ফলে একাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না বলেই জানান ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার।
বঙ্গে ফিবছর যত মহিলা ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার তিন ভাগের এক ভাগই স্তনের ক্যানসার। দেশের তথ্য বলছে, প্রতি চার মিনিটে একজন মহিলা স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত। জরায়ু ক্যানসার ধরতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড স্ক্রিনিং হবে।