সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রীতি মেনে নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগেই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল৷ নিজেদের সুবিধা মতো ভোটাররা যাতে তাঁদের রায় দিতে পারেন, সে জন্যই এই ব্যবস্থা৷ কিন্তু চার বছর আগে বিভিন্ন প্রদেশে আফ্রিকান-আমেরিকানরা যেভাবে ঢেলে বারাক ওবামার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, সেই ছবিটা এবার দেখা যাচ্ছে না৷ টানা দু’বারের ডেমোক্র্যাট জমানায় উন্নয়নের প্রত্যাশা পূর্ণ না হওয়ার হতাশা তো আছেই৷ ওবামা না থাকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সেই আবেগটাও অনেকটা উধাও৷ নির্বাচনের প্রাক্কালে সমীক্ষায় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হিলারির ব্যবধান লক্ষণীয়ভাবে কমেছে৷ তার উপর কৃষ্ণাঙ্গ ভোটদানের এই হারও হিলারিকে চিন্তায় রাখছে৷
যেমন নর্থ ক্যারোলিনায় কৃষ্ণাঙ্গ ভোট কমেছে ১৬ শতাংশ৷ শ্বেতাঙ্গ ভোট বেড়েছে ১৫ শতাংশ৷ পরিস্থিতি পাল্টাতে বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নিয়ে এসে আগ্রাসী প্রচার চালালো ডেমোক্র্যাটরা৷ দুই বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট এদিন জোর গলায় হিলারির হয়ে সওয়াল করলেন৷ তিনি বলেন, আমায় ভালবাসলে, ওঁকে ভোটদিন৷ ফ্লোরিডায় চার বছর আগে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে ভোট দিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গরা৷ ২০১২-র প্রথম দিন তাঁরা ছিলেন মোট ভোটারের ২৫ শতাংশ৷ এবার সেই হার ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে৷ একই অবস্থা ক্লিভল্যান্ড, টোলেডোর মতো ডেমোক্র্যাট এলাকায়৷ যার নেপথ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
পাশাপাশি, সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে দুই প্রার্থীর মধ্যে ট্রাম্প আট শতাংশ ভোটে এগিয়ে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি-র যৌথ সমীক্ষায় এই তথ্য মিলেছে৷ সেপ্টেম্বরে বিগত সমীক্ষায় দু’জনের প্রাপ্ত ভোট ছিল সমান৷ অবশ্য আমেরিকার ছোট দলগুলির সমর্থকদের মধ্যে হিলারি কিছুটা বেশি জনপ্রিয়৷ ট্রাম্পের চেয়ে তিনি এক শতাংশ এগিয়ে৷
এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর একের পর এক পদক্ষেপ৷ সম্প্রতি হিলারির ব্যক্তিগত ই-মেল সার্ভার নিয়ে নজিরবিহীনভাবে ফের তদন্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন সংস্থার প্রধান জেমস কোমি৷ এবার ডেমোক্র্যাটদের অন্যতম বিতর্কিত পৃষ্ঠপোষক মার্কি রিচকে ক্ষমা প্রদর্শনের ১৫ বছরের পুরনো ঘটনায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নিয়ে নিজেদের ১২৯ পৃষ্ঠার অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট তারা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে৷ যা নিয়ে কোমির বিরুদ্ধে দলীয় রাজনীতিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ডেমোক্র্যাটরা৷ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে হিলারির সঙ্গী ব্রায়ান ফ্যালন টুইট করেছেন, “সাতের দশকে আবাসন ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বৈষম্য বা করফাঁকি নিয়ে এফবিআই কি নথি প্রকাশ করবে?” অথচ কয়েক মাস আগেই নির্বাচন এগিয়ে এসেছে বলে রুশ হ্যাকারদের নিয়ে তথ্য প্রকাশে আপত্তি করেছিলেন কোমি৷ স্বাভাবিকভাবেই এফবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগে সরব ডেমোক্র্যাটরা৷
তবে হিলারি সমর্থকদের কাছে আশার খবর, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ট্রাম্প বিরোধিতাও ক্রমশ বাড়ছে৷ বিশেষত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে৷ তাঁরা মনে করছেন, ট্রাম্প তাঁদের কেউ নন৷ ১৮৫৪ সালে উইসকনসিনের রিপনে রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল৷ সেখানেও ট্রাম্প সম্পর্কে ভোটারদের একই মনোভাব৷ এমনকী, প্রদেশের প্রাইমারিতে সেনেটর টেড ক্রুজের কাছে ট্রাম্প ১৩ শতাংশ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন৷ পরিস্থিতি বুঝে ট্রাম্প মঙ্গলবার উইসকনসিনে প্রচারে নিজেকে শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু এই প্রদেশে ‘আর্লি ভোটিং’-এ প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়েছেন৷ হিলারি সেখানে ছ’শতাংশ ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
The post কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের হার কম, অস্বস্তিতে হিলারি appeared first on Sangbad Pratidin.