অরিঞ্জয় বোস, মুম্বই: চলতি বিশ্বকাপে (ODI World Cup 2023) কথা বলছে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ব্যাট। ৯টি ইনিংসে কোহলির রান ৫৯৪। সমসংখ্যক ইনিংসে রোহিতের সংগ্রহ ৫০৩ রান। ২০২৩ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে এই মুহূর্তে কোহলি। রোহিত রয়েছেন চার নম্বরে।
বুধবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামছে ভারত। শেষ চারের লড়াইয়ের আগে দেশের ক্রিকেটমহলে প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, কোহলি এবং রোহিতের ব্যাট নক আউটে গর্জে উঠবে তো?
চলতি বিশ্বকাপে দুই তারকা ব্যাটার যে ফর্মে রয়েছেন, যে ভাবে প্রতিপক্ষ বোলারদের মাঠের যত্রতত্র ফেলছেন, তাতে এমন প্রশ্ন ওঠাই উচিত নয়। তবুও উঠছে। কারণ তাঁদের অতীত পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এলে কোহলি ও রোহিতের ‘গাণ্ডীব’ থমকে যায়। বিশ্বকাপের শেষ চারের লড়াইয়ে দুই তারকার পরিসংখ্যান মোটেও তাঁদের নামের প্রতি সুবিচার করে না। সেই কারণেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন জাগছে, সেমিফাইনালে কোহলি ও রোহিত রান পাবেন তো?
[আরও পড়ুন: কাপযুদ্ধের সেমিফাইনালে ‘আইকন’ শচীনের কোন দুই রেকর্ড ভাঙতে পারেন বিরাট?]
১২ বছর আগে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ভারত। সেবার রোহিত শর্মা ভারতীয় দলে ছিলেন না। বিরাট কোহলি ছিলেন। কিন্তু সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলি মাত্র ৯ রানে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
চার বছর পরে ২০১৫-র বিশ্বকাপে কোহলি হয়ে ওঠেন দেশের প্রাণভোমরা। মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের ব্যাটিংয়ের ‘তুরুপের তাস’। কোহলির চওড়া ব্যাট গর্জে উঠলেই ভারত জিতবে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও কোহলি ব্যর্থ হন। মাত্র এক রানে জনসন তুলে নেন কোহলিকে। রোহিতও বেশি দূর এগোতে পারেননি। ৩৪ রান করার পরে জনসনের ঘাতক ডেলিভারির কাছে নতিস্বীকার করেন মুম্বইকর। অস্ট্রেলিয়ার পাহাড়প্রমাণ ৩২৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত থেমে যায় ২৩৩ রানে।
২০১৯-এর বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা পাঁচ-পাঁচটি সেঞ্চুরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ বোলারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন ‘হিটম্যান’। কিন্তু আসল সময়ে রোহিত শর্মার ‘রথ’ থেমে যায়। শেষ চারের লড়াইয়ে কিউয়িদের বিরুদ্ধে মাত্র ১ রানে ফিরতে হয় রোহিতকে। অধিনায়ক কোহলিও ১ রানে এলবিডব্লিউ হন ট্রেন্ট বোল্টের ডেলিভারিতে।
আগের তিনটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দুই তারকার ব্যর্থতাই নতুন করে প্রশ্ন তুলছে দেশজুড়ে। এবার কি ইতিহাসের অভিমুখ বদলাবে? রোহিতের ছেলেবেলার কোচ দীনেশ লাড আশাবাদী। হাতের তালুর মতো চেনা ওয়াংখেড়েতে ব্যাট হাতে রোহিত নামার আগে দীনেশ বলছেন, ”এবারের বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রোহিত আর কোহলি পারফর্ম করেছে। সেমিফাইনালেও ওরা দুজন রান পাবে।”
কিন্তু আগের নটি ম্যাচ আর সেমিফাইনাল যে সব অর্থেই আলাদা। নক আউট পর্বে পা ফস্কালেই ছিটকে যাওয়ার ভয় আছে। প্রত্যাশার চাপও বাড়ছে। এই চাপ আবার বুমেরাং হয়ে ফিরবে না তো? দীনেশের যুক্তি, ”বেশি কিছু ভাবনাচিন্তার ব্যাপার তো নেই। নটি ম্যাচে ঠিক যেভাবে বিরাট আর রোহিত ব্যাট করে এসেছে, সেই খেলাই খেলতে হবে সেমিফাইনালে। তাহলেই রান আসবে।”
অতীত পরিসংখ্যান ভুলে যাওয়ার পরামর্শ তারকা-ব্যাটারদের দিচ্ছেন বর্ষীয়ান কোচ। বলছেন, ”অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা সহজাত খেলা নষ্ট করে দেয়। খোলা মনে খেলো তোমরা।”
গুরুর আশীর্বাদ রয়েছে ছাত্রের উপরে। দেশবাসীর প্রার্থনাও রোহিত-কোহলির সঙ্গে। বাকিটা জানা যাবে বুধবার। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।