সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উইকেট পিছু এক প্লেট বিরিয়ানির চুক্তিতে একদিন ক্রিকেটজীবন শুরু করেছিলেন। আজ তিনিই ভারতের বোলিংয়ের প্রাণভোমরা।
সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি এমন এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন। সেই তিনিই এখন বলকে কথা বলান। তাঁর বলের সিম পজিশন দেখে ঈর্ষান্বিত হতে পারেন পড়শিরা। গর্ব করতেই পারেন গৃহস্থ। তিনি মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)।
[আরও পড়ুন: ব্যাট কথা বললেই দূর হয় দূরত্ব, ৫০ শতরানের মালিক কোহলিকে প্রশংসায় ভরালেন সৌরভ]
প্রতিপক্ষের ওপেনারদের ফেরাতে, মিডল অর্ডারকে ধাক্কা দিতে বা ম্যাচের কঠিন সময়ে উইকেট তুলে নিতে তিনিই অধিনায়কের ভরসা।তিনি মহম্মদ শামি। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার তুরুপের তাস। বুধসন্ধেয় তাঁর হাতে সাদা বল যখন তুলে দিলেন রোহিত, তখন গোটা স্টেডিয়ামে সিংহনাদ ‘শামি-শামি’। নিউজিল্যান্ডের ওপেনারদের ফেরাতে তিনিই দেশের একনম্বর বাজি। শামি ফেরালেন দুই কিউয়ি ওপেনেরাকে। গ্যালারি উত্তাল হল। রোহিত-বিরাটের আলিঙ্গনে ঢাকা পড়ে গেলেন মহম্মদ শামি। অথচ এই শামিরই তো জায়গা হচ্ছিল না প্রথম একাদশে। সবাই মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আর তাঁকে মাঠের বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে। ছলছল চোখে মনের যন্ত্রণা লুকোচ্ছেন শামি। কোনও এক মহম্মদ সিরাজও তাঁকে পিছনে ঠেলে আগে ঢুকে পড়ছেন দলে। মাঠের বাইরে থেকে ভেসে এসেছে অনেকের চাপা কণ্ঠস্বর, কেন জায়গা পাচ্ছেন না শামি? কেন? কেন? শামি উত্তর দেননি। চোয়াল চেপে অপেক্ষা করছিলেন সঠিক সময়ের। সুযোগ এসেও গেল। কারও পৌষমাস, কারও সর্বনাশ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চোট পেলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। হার্দিক আউট, শামি ইন। দলে সুযোগ পেয়েই শামি ধরা দিলেন অন্য অবতারে। উইকেটের ছররা ছোটালেন।তিনি তো চিরকালের লড়াকু ক্রিকেটার। একদিন ১৬ বছরের কিশোর ছেলেটা কলকাতার ট্রেন ধরেছিলেন। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই ছেলেটার জার্নি এখনও শেষ হয়নি। এখনও তিনি লড়াই করেই চলেছেন। তিনি নিজেই টুইট করেন, সবুরে মেওয়া ফলে।
শামি এখন দেশের হৃদস্পন্দন। ভাগ্যবিড়ম্বিত তাঁরই সতীর্থ হার্দিক। পুরোদস্তুর সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপ দলে ফেরার জন্য এনসিএ-তে ছিলেন তিনি। কিন্তু ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগেরদিনের সকালেই এল হৃদয়বিদারক খবর। সেরে না ওঠায় বিশ্বকাপ থেকেই ছুটি হয়ে গেল হার্দিক পাণ্ডিয়ার। শামি অবশ্য এই কদিনে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন ভারতীয় দলে। আগুন ঝরাচ্ছেন। উইকেট নিচ্ছেন। অধিনায়ক রোহিতের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন।
আজ ওয়াংখেড়েতে শামি-শামি রব উঠল। সেই শামিই আবার ক্যাচ ফেললেন কেন উইলিয়ামসনের। বিশ্বস্ত উইলিয়ামসন ও ডারিল মিচেল যখন ভারতের নাভিশ্বাস তুলতে শুরু করেছে, তখন শামিকে শাপশাপান্তও করা হচ্ছিল। সেই শামিকেই আক্রমণে ফিরিয়ে এনে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন রোহিত। শামি ফেরালেন বিপজ্জনক উইলিয়ামসনকে। পরের বলেই লাথামকে এলবিডব্লিউ করলেন মহম্মদ শামি। ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়া ভারতকে আবার ম্যাচে ফেরালেন শামি। সাত উইকেট নিয়ে ভারতকে ফাইনালে তুললেন শামি।তিনি যখন আরও এক রূপকথা লিখছেন, ডেভিড বেকহ্যামের পাশে বসে ওয়াংখেড়েতে তখন খেলা দেখছেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। বসে বসে ভারতের ইউটিলিটি অলরাউন্ডার শুনলেন ‘শামি-শামি’ চিৎকার। আসলে তা গোটা দেশের কণ্ঠস্বর। দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসে এখন শুধুই মহম্মদ শামি।
[আরও পড়ুন: ঈশ্বরের আপন ভূমিতে বিরাট অধীশ্বর, সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি করে ‘সর্বকালের সেরা’ কোহলি]