সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চার দশক আগের কপিল-রূপকথা (Kapil Dev) ফিরে এল ম্যাড-ম্যাক্স সাইক্লোন হয়ে! ১৯৮৩ সালের প্রুডেনসিয়াল কাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হরিয়ানভির অপরাজিত ১৭৫ রান এখনও দেশের শ্বাস-প্রশ্বাসে। কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে কপিলদেব নিখাঞ্জের অপার্থিব সেই ইনিংস। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অজি তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (Glenn Maxwell) অবিশ্বাস্য ইনিংস দেখার পরে হৃদয় বলতে চায়, ‘আহা কী দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না।’
ভোলার কথাও নয়। একক দক্ষতায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও যে অসাধ্যসাধন করা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। ক্রিকেট অনুরাগীদের স্মরণ করিয়ে দিলেন কপিলের সেই অমর ইনিংস। অজি তারকার ব্যাটিং দেখে কপিলের অবিশ্বাস্য ইনিংস উপলব্ধি করা সম্ভব।
[আরও পড়ুন: ICC ODI World Cup: চতুর্থ স্থানের জন্য লড়াইয়ে তিন দল, সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ কে?]
চল্লিশ বছর আগের ক্রিকেটবিশ্ব জানত না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কী বস্তু। মঙ্গুজ ব্যাট বাজারে আসেনি। সুইচ হিট, স্কুপ-সহ আরও হরেকরকমের শটও মারতেন না ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটসম্যান নাম বদলে ব্যাটার হয়নি তখনও। ফিল্ডিংয়েও সীমাবদ্ধতা ছিল না। রঙিন পোশাকে বিশ্বকাপের ধারণা তখনও শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেনি। এরকমই এক সময়ে কপিল রূপকথা তৈরি করেছিলেন টানব্রিজ ওয়েলস-এ। কিন্তু সেই ইনিংস না দেখার আফশোস রয়ে গিয়েছে আমাদের।
১৯৮৩-র ১৮ জুন টানব্রিজ ওয়েলসের নেভিল গ্রাউন্ডে টিভি ক্যামেরাই ছিল না। বিশ্বকাপের সব থেকে বড় ট্র্য়াজেডি বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। সেদিন মাঠে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক ছাড়া আর কারওর পক্ষেই সেই মহাকাব্যিক ইনিংস দেখা সম্ভব হয়নি। সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংসগুলোর একটি সম্পর্কে তাই প্রতক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার উপরেই নির্ভর করে থাকতে হয়।
এই ২০২৩-এ ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবিক ইনিংস ক্যামেরাবন্দি হয়ে গিয়েছে। ভাবীকালের কোনও ক্রিকেটপিপাসু চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন করতে পারবেন। টানব্রিজ ওয়েলসে সেদিন ১৭ রানে ৫ উইকেট চলে গিয়েছিল ভারতের। ভারতের টপ অর্ডার হারাকিরি করেছিল। হার অনিবার্য এই রকম এক মুহূর্তে জ্বলে উঠেছিলেন কপিল। জিম্বাবোয়ের কাছে হারলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল। কপিল নিজেকে বারংবার বলেছিলেন, ”শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে হবে আমাকে।” ওয়াংখেড়ের ম্যাড-ম্যাক্সও প্রায় একই কথা বলেছেন, ”শেষ পর্যন্ত থাকতে চেয়েছিলাম। সেটা পারায় ভালো লাগছে।” আফগানদের কাছে হার মানলে অস্ট্রেলিয়াকে অবশ্য মেগা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হতো না।
চিন্তা-ভাবনায়, চেতনে, মননে, পারফরম্যান্সে কোথায় যেন এক হয়ে যান কপিল ও ম্যাক্সওয়েল। ফুটতে থাকা আফগানরা একসময়ে অস্ট্রেলিয়ার নাভিশ্বাস তুলে দেয়। ৯১রানে ৭ উইকেট চলে গিয়েছিল অজিদের। ওয়ার্নারদের অয়ারাম-গয়ারাম ব্যাটিং দেখার পরে অতি বড় অজি সমর্থকও জয়ের আশা করেননি। হার অনিবার্য ধরেই নিয়েছিলেন অনেকে।
অস্ট্রেলিয়ার সাজঘরও হয়তো ধরেই নিয়েছিল, আফগানিস্তানের কাছে হারতে হবে ম্যাচটা। ম্যাক্সওয়েল অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন। সেই সঙ্গে মুম্বইয়ের আবহাওয়া ম্যাড-ম্যাক্সের কাজ আরও কঠিন করে তুলেছিল। মুম্বইয়ের চরম আর্দ্রতায় পায়ের পেশিতে টান ধরে ম্যাড-ম্যাক্সের। সেই সঙ্গে কোমরের চোট আরও কঠিন করে তোলে ম্যাক্সওয়েলের কাজটা। রান নিতে পারছিলেন না। দৌড়তে কষ্ট হচ্ছিল। চার-ছক্কার উপরে নির্ভর করেছিলেন তিনি। এদিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছিল অন্যপ্রান্ত থেকে যেন উইকেট না যায়। আফগানদের করা ২৯১ রান তখন এভারেস্ট-সম বলে মনে করা হচ্ছে। অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাড-ম্যাক্স অসম এক লড়াই লড়তে শুরু করেন। চার-ছক্কার ঝড় বইয়ে দিয়ে ম্যাক্সওয়েল অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে আনেন। উচ্ছ্বসিত দেখায় অজি সাজঘরকে। এভাবেও ম্যাচ (ODI World Cup 2023) জেতা যে সম্ভব,দেখিয়ে দিলেন ম্যাক্সওয়েল।