অরিঞ্জয় বোস: ঠিক এক যুগ আগে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের রূপকার ছিলেন তিনি। ওয়াংখেড়ে-তে তাঁর সেই ‘উইনিং স্ট্রোক’ অমরত্ব লাভ করেছে ক্রিকেট ইতিহাসে। এক যুগ পর আবারও বিশ্বজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে টিম ইন্ডিয়া। মুম্বইয়ের সেই মায়াবী রাত বারো বছর পর ফিরবে কি মোতেরায়? পারবেন রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma) স্বপ্নকে সত্যি করতে? তিনি, মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) কী ভাবছেন?
জনসমক্ষে কম্বুকণ্ঠে নিজের ভাবাবেগ প্রকাশ করেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’, এমন ঘটনা কোটিতে গুটিকয়েক। প্রচারের আড়ালে নিজস্ব পরিবৃত্তে আপন সত্ত্বাকে ঢেকে রাখতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন প্রবলভাবে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে তিনি সন্ন্যাসীসুলভ বৈরাগ্যে তপোধীর হয়ে থাকতে পারেন নাকি? পারেন না। তাই সম্প্রতি নিজস্ব পরিমণ্ডলে বন্ধুস্বজনদের সঙ্গে একান্ত অবকাশে ধোনির কথনেও ঘুরে ফিরে এসেছে ক্রিকেট। উহুঁ, ভুল বলা হল। পুনরাবৃত্ত হয়েছে বিশ্বকাপ, আর কাপ-যুদ্ধের ফাইনাল। আপামর দেশবাসীর মতো তিনি, মহেন্দ্র সিং ধোনিও ভাগ্যবিধাতার কাছে রোহিতদের বিশ্বজয়ের প্রার্থনা করছেন।
[আরও পড়ুন: ODI World Cup 2023: ‘পয়মন্ত’ নন, তবু সেই আম্পায়ারই ফাইনালে! খুশি নন ভারতীয় ফ্যানরা]
কিন্তু যুদ্ধ জয় যে মুখের কথা নয়। বারো বছর আগে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বজয়ের তাজ মাথায় পড়েছিলেন ধোনি। এবার রোহিত, বিরাটদের পথের কাঁটা অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল। পারবে টিম ইন্ডিয়া অজি-দুর্গ ভেঙে বিশ্বকাপ জিততে? অসম্ভবের কিছুই দেখছেন না এমএসডি। শোনা গেল বন্ধুদের সঙ্গে সেই ঘরোয়া আড্ডায় ধোনি বলেছেন যে, “বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে ভারতীয় দল অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে। টিমের প্রতিটি প্লেয়ার অনবদ্য ছন্দে আছে। ফাইনালেও সেই ধারবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসম্ভব নয়।”
’১১-র বিশ্বকাপে ধোনির ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। মাহির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয়ে অধরামাধুরী লাভ করেছিলেন শচীন তেণ্ডুলকর। ২৮ বছর পর ওয়ান ডে ফরম্যাটে বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারতীয় দল। কিন্তু এবারের কাপ ফাইনাল অন্য আবহ। ’১১-র সেই স্বপ্নময় ফাইনাল চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। বদলে আলোচনায় উঠে এসেছে ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের পরাজয়ের তিক্ত স্মৃতি। বিশ বছর আগের সেই হারের গ্লানি বয়ে নিয়ে চলা ভারতবাসী আজ বদলার আগুনে উজ্জীবিত। ’০৩-এর বদলা ’২৩-এ হোক, এমন তোপধ্বনিতে মন্দ্রিত হচ্ছে ভারতের আকাশবাতাস।
নিষ্পৃহ জীবনবোধ আর রহস্যময়তা মোড়কে যতই নিজেকে আড়ালে রাখুন, ধোনি নিজেও যেন টের পাচ্ছেন সেই আবেগের ঝাপটা, প্রতিশোধের উত্তাপ। বন্ধুদের সঙ্গে সেই আড্ডায় মাহি তাই বলেছেন, “রোহিতদের মানসিকতা অন্যরকম। ওরা শুধু দলের জন্য খেলছে না। খেলছে দেশের জন্য। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্লেয়াররা নিজেদের উজাড় করে দেবে ফাইনালে। দেশের জন্য ওরা কাপটা জিততে চায়। এই একাত্মবোধটাই টিমের সবচেয়ে বড় শক্তি। টিমটা এক সুতোয় বাঁধা। জয়টাই ওদের কাছে মুখ্য।”
[আরও পড়ুন: ফাইনালের আগেই গিলকে খুল্লমখুল্লা প্রেম নিবেদন সারার! তিন শব্দেই ভালোবাসা প্রকাশ]
স্বপ্নপূরণ আর স্বপ্নভঙ্গের মধ্যে যে আকাশজমিন ফারাক, সেই অনুভূতি তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। ক্রিকেটদেবতা ’১১-তে সাফল্যের বরমাল্য পড়িয়ে দিয়েছিলেন ধোনির গলায়। সেই ‘ফিনিশারে’র সেই কবচকুণ্ডল আবার কেড়ে নিয়েছিলেন ’১৯ বিশ্বকাপে। সেমিফাইনালে তাঁর রান আউট বজ্রপাত ঘটিয়ে ভারতের কাপ-জয়ের স্বপ্নে অপমৃত্যু ডেকে এনেছিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ভাগ্যলক্ষ্মীর যে তাই প্রসন্ন থাকা দরকার। শোনা গেল, রোহিতের ভারতীয় দলে সেই সুলক্ষণ নাকি দেখতে পাচ্ছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। ফর্ম আর ভাগ্যের যুক্তবেণীতে বিশ্বজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে ধোনি তাই বলে ফেলেছেন, “ভারতীয় দলের প্রত্যেকে সেরা ফর্মে আছে। সবাই ব্রিলিয়ান্সের শিখরে। ব্যাটিংয়ে প্রত্যেকে রানের মধ্যে রয়েছে। বোলিংও দুর্দান্ত হচ্ছে। ভাগ্যও ভারতীয় দলের সঙ্গে আছে।”
গোটা দেশ যেন এক বিশেষ মুহূর্তের ধ্যানবিন্দুতে স্থির। আর ধোনি? ভারতের সফলতম অধিনায়কও সেই স্বপ্নের শরিক। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি থেকে মহম্মদ সামি, রবীন্দ্র জাদেজা– ভারতীয় ক্রিকেটের উত্তরসাধকদের উত্থান তাঁর হাত ধরেই। ’১১-র চ্যাম্পিয়ন বোধহয় নিজেও জানেন, পারলে রোহিতরাই পারবেন, যেমনটা তিনি পেরেছিলেন এক যুগ আগে। ভারতীয় ক্রিকেটে সাফল্যের ভগীরথ হতে। তাই বরাবরের সোজাসাপ্টা এমএস-ও রোহিতের এই ভারতকে তাঁর চ্যাম্পিয়ন টিমের আগে রাখছেন। বন্ধুদের আড্ডায় ধোনির বক্তব্য হল, “আমার ২০১১-র টিমের চেয়েও এই টিমটা অনেক বেশি নিখুঁত ক্রিকেট খেলছে। অনেক বেশি দাপটের সঙ্গে খেলছে। রোহিতের এই টিমটাকে চ্যাম্পিয়নের মতো দেখাচ্ছে।”
ফিনিশার বলছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি বলছেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কখনও ভুল হবে নাকি? সম্ভব?