সুমন করাতি, হুগলি: বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাফেতে খেতে গিয়ে প্রিয় পাস্তা অর্ডার করেছিলেন। গরমাগরম ডিশ পাতে পড়ামাত্রই প্রায় আর্কিমিডিসের 'ইউরেকা' বলে লাফিয়ে ওঠেন কোন্নগরের সৌম্যদীপ হালদার। কেন? ঘি রঙা পাস্তার নলের মতো নরম চেহারা দেখেই মাথায় খেলে যায় ম্যাজিকে। যদি পাস্তার উপর পয়েন্টেড বলপেন দিয়ে কিছু লিখে রাখা যায়, তাহলে কেমন হয়? ভাবতে বসেন রসায়নের স্নাতকোত্তর সৌম্যদীপ। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। পাস্তার উপর তিনি লিখে ফেললেন সোজা পর্যায় সারণী বা পিরিয়ডিক টেবিল! আর এহেন কীর্তির জেরে তাঁর নাম উঠে গেল ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে।
শিল্পকলা মানেই সৃষ্টিকর্ম। আর একেকজনের হাত ধরে তৈরি হয় একেকরকম শিল্প। কোন্নগরের বাসিন্দা সৌম্যদীপ হালদার সেভাবেই নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দারুণ চমকে দিলেন। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে রসায়নে মাস্টার্স করেছেন। এখন নেটের প্রস্তুতি চলছে তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে একদিন বন্ধুদের সঙ্গে মানিকতলা চত্বরে একটি ক্যাফেতে খেতে গিয়েছিলেন সৌম্যদীপ। পাস্তা তাঁর বড় প্রিয়। তাই পাস্তা অর্ডার করেন। সেইসঙ্গে কিছু বিস্কুট, স্ন্যাকস। তাতে ছাপানো এমব্লেম নিয়ে কথা বলতে বলতে তাঁর মাথায় আসে, পাস্তার উপরও যদি এমন এমব্লেম করা যায় কেমন হয়!
ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম কোন্নগরের সৌম্যদীপ হালদারের। নিজস্ব ছবি।
সেই ভাবনা থেকেই বাড়িতে একদিন পাস্তায় লেখার চেষ্টা করেন সৌম্যদীপ। প্রথমে সফল হননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। কয়েকবারের চেষ্টায় অবশেষে পাস্তার উপর পেন দিয়ে লিখে ফেলেন তিনি! তারপর বাকিটা...ইতিহাস। ৭ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে দশটি পাস্তার উপর লাল-সবুজ কালির বলপেন দিয়ে পর্যায় সারণী বা পিরিয়ডিক টেবিল লিখে ফেলেন রসায়নের এই ছাত্র। অক্টোবর মাসে সেই লেখা ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে আবেদন করেন। নভেম্বরে জানতে পারেন, মনোনীত হয়েছে তাঁর অপূর্ব শিল্পকর্ম। সেই পুরস্কার এবার বাড়িতে এসে পৌঁছল। তা হাতে নিয়ে খুশি পরিবারের সবাই।
ছেলের কীর্তির এসব কথা জানতেনই না বাবা। পুরস্কার বাড়িতে আসার আগে জানতে পারেন। সৌম্যদীপ বলেন, ''আমি নিজে খেতে খুব ভালোবাসি। পাস্তা আমার প্রিয় খাবার আর রসায়ন আমার প্রিয় বিষয়। তাই খাবার আর রয়াসনকে মিলিয়ে এই ধরনের একটা পরীক্ষানিরীক্ষা করে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম ওঠায় খুব ভালো লাগছে। এরপর এশিয়া বুক অব রেকর্ড এবং গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্য কাজ পাঠানোর ইচ্ছা আছে।''