সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অপত্য স্নেহের শক্তিই কি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি! সেই নজির তৈরি করলেন চিনের এক ব্যক্তি। শরীরে তামার অভাবে বিরল রোগগ্রস্ত নিজের শিশু সন্তানকে বাঁচাতে বাড়িতে ল্যাবরেটরি তৈরি করে আনকোরা হাতে ওষুধ প্রস্তুত করে ফেললেন বাবা। এখন সেই ওষুধ খেয়েই ভাল আছে দুই বছরের ছেলে হাওয়াং।
ডাক্তার বলেছিলেন, হাওয়াং মাস খানেকের বেশি বাঁচবে না, যদি না প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা যায়। এরপর পিতা জু ওয়েই কালক্ষেপ করেননি। চিনের (China) ওষুধের বাজার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। কিন্তু মেনকেস সিন্ড্রোমের (Menkes Syndrome) ওষুধ মেলেনি। ঘটনায় অসহায় বোধ করেন জু। ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিল যে ছেলে! বিদেশে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করতে চাইলেও করোনার কারণে তাও সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ বিদেশে যাতায়াতে এখনও কঠিন বিধিনিষেধ রয়েছে সে দেশে। অন্য উপায় না দেখেই বাড়িতে ল্যাবরেটরি তৈরি করে নিজে হাতে সন্তানের ওষুধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন স্কুলপাশ পেশায় ছোট অনলাইন ব্যবসায়ী জু ওয়েই।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Colombia University) অধ্যাপক জন মেনকেস (John Menkes) এবং তার সহকর্মীরা পুরুষ শিশুদের একটি বিরল রোগ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেই বিরল রোগই এখন মেনকেস সিন্ড্রোম নামে পরিচিত। মেনকেস অদ্ভুত চুলের রোগ। শরীরে তামার অভাবে এই রোগ হয়ে থাকে। জিনগত এই রোগের ওষুধ সহজলভ্য নয়। ফলে ছেলের জন্য বাড়িতে ল্যাবরেটরি তৈরি করে ওষুধ তৈরি করতে বাধ্য হন জু।
[আরও পড়ুন: ঠিক যেন শাহজাহান! ভালবেসে স্ত্রীকে তাজমহলের আদলে তৈরি বাড়ি উপহার দিলেন স্বামী]
চিনের কানমিং শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন বছর তিরিশের জু ওয়েই। সেখানেই ল্যাবরেটরিটি তৈরি করেন তিনি। মেনকেস সিন্ড্রোম নিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করে ওষুধ তৈরি করেন তিনি। শুরুতে ভাষা সমস্যা হচ্ছিল। যেহেতু মেডিসিনের অধিকাংশ জার্নালই ইংরেজি ভাষায় লেখা। এদিকে চিনা ছাড়া অন্য ভাষা জানা নেই জু-র। শেষ পর্যন্ত অনুবাদের সাহায্য নেন হাওয়াংয়ের পিতা। এবং কাজের কাজটি করেও ফেলেন।
জুই ওয়েই-এর কথায়, “আমি ওষুধ তৈরি করতে পারব কী পারব না, তা ভাবার মতো সময়ও আমার কাছে ছিল না। এটা করতেই হত আমাকে।” জু ওয়েই বলেন, “পরিবার, বন্ধুরা আমার বিরুদ্ধে ছিল। সকলেরই বক্তব্য ছিল এটা অসম্ভব।”
[আরও পড়ুন: হাইওয়েতে টাকার বৃষ্টি! কুড়োতে ছুটে এলেন আমজনতা, ভিডিও ভাইরাল]
ওষুধ তৈরি করেই কিন্তু ছেলেকে খাওয়াননি জু। পেশাদার মানসিকতার পরিচয় দেন তিনি। প্রথমে একটি খরগোশের উপরে প্রয়োগ করে দেখেন। তারপরই সন্তানকে খাওয়ান। শুরুতে কম ডোজ দিতেন, পরে একটু একটু করে ডোজের পরিমান বাড়িয়েছেন। সেরে না উঠলেও বাবার হাতে তৈরি ওষুধ খেয়ে আগের থেকে অনেকেটাই ভাল আছে আদরের হাওয়াং।