সাবিরুজ্জামান, লালবাগ: প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও চলতি বছর আমের ব্যাপক ফলন। তাই তেমন দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে চন্দনখোসা, চম্পা, সারেঙ্গার মতো দামি আমও খাচ্ছে গরু। জেলায় আম সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান কৃষকরা।
আম গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল এবং গুটি এসেছিল। আচমকাই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে প্রতিটি বাগানে আম ঝরে যেতে শুরু করে। থাকায় চাষিদের মাথায় হাত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় আম পরিমাপেও তেমন বড় হয়নি। তবে গতবারের তুলনায় ফলন দু’গুণেরও বেশি। সুতরাং, বাজারে আম নিয়ে গিয়েও বিক্রি করতে হচ্ছে আড়ত মালিকের মর্জি মতো দামে। এবছর চন্দনখোসার মতো দামি আম ১৭ টাকা কিনছেন আড়তদাররা। চম্পা ১০ টাকা। সারেঙ্গা ১০ টাকা। হিমসাগর ১৫ টাকা। রুগনি ১০ টাকা। গোলাপখাস ১৭ টাকা। রানি ১৫ টাকা। চন্দনখোসার পাইকারি দর ছিল ৩০ টাকা, রানী ২৫, সারেঙ্গা ৩২ টাকা, হিমসাগর ৩৫ টাকা, গোলাপখাস ২৫ টাকা, এমনটাই দাবি করেছেন লালবাগের কুড়মিতলা মোকামের আড়ৎদার আনন্দ সরকার।
[আরও পড়ুন: মাংস-ভাত খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে নাবালিকাকে ‘ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার প্রতিবেশী যুবক]
আনন্দবাবু বলেন, “অন্যান্য বছরের মতো এবারও জেলার আম বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, অসম ও গুয়াহাটিতে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার থেকে জোগান বেশি হওয়ায় বাজার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এদিকে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। বাইরে থেকে আসা পাইকাররা খুব বেশি আম নিতে চাইছেন না। ফলে বাজারে আম নিয়ে গিয়ে নাকালে হতে হচ্ছে কৃষকদের।” চন্দ্রহাটের কৃষক সিরাজুল ইসলাম, কাপাসডাঙ্গার ইন্তার আনসারি বলেন, “বাজারে আম নিয়ে গিয়ে আড়তে বসে থাকতে হচ্ছে। আড়তদারের কাছে কাকুতিমিনতি করে আম গুছিয়ে দিতে হচ্ছে। তাই নগদ টাকাও মিলছে না আম বিক্রি করে।” লালবাগ ওয়েসিস পার্ক এলাকারও ছবি একইরকম। স্থানীয় কৃষক সঞ্জয় হালদার বলেন, “আমার প্রায় বাইশ বিঘা বাগান রয়েছে। এবার গাছে আম টিকিয়ে রাখতে জল স্প্রে থেকে ভিটামিন ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে। এদিকে প্রতিদিন গাছ থেকে পাকা আম নামাতে খরচ পড়বে আনুমানিক ১ লক্ষ টাকার মতো। আর এখন যা বাজার তাতে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ টাকার বেশি আম বিক্রি করতে পারব না।”
ফলন দেখে আমচাষিরা যা স্বপ্ন বুনতে শুরু করছিলেন, তাই এখন কেড়েছে রাতের ঘুম। আবার গাছ থেকে আম না পাড়লে আগামী বছর ওই গাছে আম আসবে না, এই তথ্য দিয়ে লালবাগের কৈরিপাড়ার আম চাষি অমর রায় দাবি করেন, চন্দনখোসা, চম্পা আম বাজারে নিয়ে গিয়ে দাম না পেয়ে গরুকে খাইয়েছেন তাঁরা। এদিকে জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. প্রভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “জেলায় বাইশ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমবাগান রয়েছে। আমবাগান তৈরিতে মানুষের উৎসাহ বাড়ছে প্রতি বছর। এবার আমের ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা দাম পাচ্ছেন না।” নবাবি আমল থেকে জেলার আমের সুখ্যাতি রয়েছে। তথ্য বলছে, আমের বাগানও বেড়েছে অনেক। কিন্তু আম সংরক্ষণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন আমচাষি সঞ্জয় হালদার, সিরাজুল ইসলামরা, প্রদীপ মণ্ডলরা।