রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: এ এক ভূতুড়ে ব্যাপারই বটে! অসুস্থ উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary Exam) পরীক্ষার্থীকে ‘ভূতে ধরেছে’ – এই ভাবনা থেকে তাকে চিকিৎসক নয়, ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হল! যার জেরে দুটি পরীক্ষা দিতেই পারল না আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ওই পরীক্ষার্থী। আর এই খবর চাউর হতেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিরা গেলেন ওই ছাত্রীর বাড়িতে ‘ভূত’-এর ভয় (Ghost Panic) কাটাতে। তাতেও অবশ্য লাভ হয়নি। পরীক্ষা দিতে পারেনি ওই পরীক্ষার্থী।
আলিপুরদুয়ার জংশন নর্থ পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী। এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছিল শ্যামাপ্রসাদ হাই স্কুলে। কিন্তু সোমবার ও মঙ্গলবার ছিল অর্থনীতি ও এডুকেশন পরীক্ষা। পরিবারের দাবি, রবিবার রাত থেকে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। সোমবার সকালে ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক করিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে গেলেও সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। সোমবার তাকে হাসপাতালে (Hospital) ভর্তি করা হয়। বন্ড সই করে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনে আবার ওঝার কাছে নিয়ে যান তার পরিবারের লোকজন। ওই ছাত্রীর শাশুড়ি প্রতিমা রায় বলেন, “আমাদের বাড়ির চারপাশে বেশ কিছু অপমৃত্যু হয়েছে। সেই কারণে আমরা ভূতে বিশ্বাস করি। আমার বউমাকে ভূতে ধরেছিল। ও অন্যরকম আচরণ করেছিল। ওঝাকে দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে ঠিক করেছি। তবে এখনো ওর ভূতের ভয় কাটেনি। বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে পারে কিনা দেখি। হাসপাতালে থাকলে ওকে ঠিক করতে পারতেন না চিকিৎসকরা।”
[আরও পড়ুন: কবে কার্যকর হবে নয়া দণ্ডসংহিতা আইন? লোকসভার আগে বড়সড় ঘোষণা কেন্দ্রের]
এই খবর পেয়ে ‘ভূতে’র ভয় কাটাতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিরা হাজির হন ছাত্রীর বাড়িতে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বুঝতে পারেন, মেয়েকে ভূতেই ধরেছিল। তবে এখন সে সুস্থ। ফলে সে এখন চাইছে, যে পরীক্ষাগুলো দিতে পারেনি, তা দিতে। ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিয়েছেন, আবার ফর্ম ফিলআপ করে আগামী বছর পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
[আরও পড়ুন: আপের সঙ্গে আসন সমঝোতা ঘোষণার পরই কংগ্রেসে অসন্তোষ, ক্ষুব্ধ খোদ আহমেদ প্যাটেলের পরিবার]
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBCHSE) আলিপুরদুয়ার জেলায় পরীক্ষা পরিচালন কমিটির সদস্য ভাস্কর মজুমদার বলেন, “এই ঘটনা আমাদের কাছে খুব লজ্জার। বর্তমান সময়ে এমন কেউ ভাবতে পারেন সেটাই আমাদের কাছে লজ্জার বিষয়। আমিও একজন শিক্ষক। সেই কারণে এই ছাত্রীর বাড়িতে এসে তাদের বুঝিয়েছি। ২৭ ও ২৮ তারিখ ওই ছাত্রীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস পরীক্ষা রয়েছে। আমরা চাইছি, ওই ছাত্রী দুটি পরীক্ষা দিক। আগামী বছর বাকি বিষয়গুলি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবার ফর্ম ফিলআপ করুক।” তবে ওই ছাত্রীর আক্ষেপ, “আমি যে দুটো পরীক্ষা দিতে পারিনি, এই বছরই সেই পরীক্ষা দিতে চাই। আমি শুনেছি, অন্য রাজ্যে পরীক্ষার একমাসের মধ্যে কেউ আবার পরীক্ষা দিতে চাইলে পরীক্ষা দিতে পারে। আমাদের রাজ্যে কেন এই নিয়ম নেই?”