সুমন করাতি, হুগলি: চুঁচুড়ার কোর্ট চত্বরে লম্বা লাইন। কোনও আইনজীবী বা মহুরির কাছে ভিড় নয়। লাইন পড়েছে খাবার দোকানে। ব্যস্ত তরুণী। হাসিমুখে একের পর এক প্লেট ভরে সুস্বাদু খাবার দিয়ে চলেছেন। সঙ্গে রয়েছেন বাবা। গ্ৰাহকদের কাছে শুধু একটাই আবদার তাঁর, খাবার কেমন হয়েছে বলে যাবেন কিন্তু। জনপ্রিয় এই দোকানের নাম 'গ্রাজুয়েট পিউ দি'।
কলেজ শেষ করে প্রথম দিকে হস্টেলে ওয়ার্ডেনের কাজ করতেন পিউ দাস। তাতে পোষাছিল না। তখনই ভাবছিলেন, কী করা যায়। আগে থেকেই কোর্ট এলাকায় তাঁর বাবা লক্ষণ দাসের একটি ছোট দোকান ছিল। ভাবেন ওই দোকানটিতেই যদি কিছু করা যায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সংসারের হাল ধরতে বাবার দোকানেই শুরু করেন নতুন 'স্টার্টআপ'।
[আরও পড়ুন: সহকর্মীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের শাস্তি! উত্তরপ্রদেশের ডিএসপিকে বসানো হল কনস্টেবল পদে]
চুঁচুড়া (Chinsurah) ধরমপুর আদর্শ পল্লীর বাসিন্দা পিউ। চন্দননগর (Chandangar) খলিশানি কলেজের ছাত্রী। দর্শনে অনার্স নিয়ে কিছুদিন আগেই স্নাতক হয়েছেন। কয়েক মাস স্বল্প বেতনের চাকরিও করেছেন। তিনিই এখন বাবার দোকান সামলাচ্ছেন। নিজের মনের মতো খাবার বানাতেও শুরু করেছেন। তাঁর বানানো পোলাও, চিকেন কম্বো বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দুপুর হলেই দোকানে উপচে পড়ে ভিড়।
শুধু দুরন্ত স্বাদের পোলাও, চিকেন পাওয়া যাচ্ছে তেমনটাই নয়, বিক্রি হচ্ছে গরম গরম ফ্রায়েড রাইস আর আলুর দমও। দাম? অন্যান্য দোকানের থেকে অনেক কম বলে দাবি তাঁর। মাত্র ৫০ টাকাতেই পেটপুরে খাবার পাচ্ছেন ক্রেতারা। তার থেকেও কম দামে খাবার মেলে, জানিয়েছেন 'পিউদি'। শুধু বলতে হবে আজকে টাকা কম আছে। বাকিটা তরুণী দোকানিই বাতলে দেবেন, কী খেলে পকেটে কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে। এক গ্রাহক বলেন, "এখানকার খাবার খুব ভালো। আজকের দিনে এত অল্প দামে পোলাও, মাংস, ফ্রায়েড রাইস ভাবাই যায় না!"
পিউ জানান, পড়াশোনা শেষ করে নতুন কিছু করার ইচ্ছা হয় তাঁর। রান্না করা তাঁর যখন শখ, তাই মানুষকে কম খরচে সুস্বাদু খাবার খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার পর থেকেই বাবার দোকানে নতুন শুরুয়াত।
যে দোকান লোক আগে চিনত না। এখন লোক মুখে ও সোশাল মিডিয়ায় সেই দোকানের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। পিউয়ের বাবা বলেন, " একদিন মেয়ে বলল দোকান সামলাবে। সঙ্গে নতুন কিছু আইটেমও রাখতে চায়। আমি আপত্তি করিনি। ও আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে-এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে। আমি খুব খুশি।" দোকান থেকে যা আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চলছে পিউদের। মুনাফা কম হলেও মানুষকে ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য, এই কাজ চালিয়ে যেতে চান 'গ্রাজুয়েট দিদি' পিউ।