সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য! জীবনের প্রতিটি বাঁক নাটকীয়তায় ভরা! ভয়ংকর দুর্ঘটনায় মাথার আঘাত। স্মৃতিশক্তি লোপ। বন্ধুর দেওয়া নামে নতুন পরিচয়ে জীবনযুদ্ধ! বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন। আবার দুর্ঘটনা। সেই মাথায় আঘাত। তারপরই মিরাকল! ভুলে যাওয়ার গ্রাম, সেখানকার নদী, গাছ, বাড়ির উঠানের খণ্ডচিত্র ভাসতে থাকে চোখের সামনে। অবশেষে কাঠখড় পুড়িয়ে গ্রামে যোগাযোগ। তারপর ফিরে পাওয়া পরিবারকে। মাঝে কেটে গিয়েছে ৪৫টি বছর। পরিবার থেকে বিছিন্ন হওয়া সেই দিনের কিশোর আজকে বৃদ্ধ।
সালটা ১৯৮০। হিমাচল প্রদেশের সিরমাউর জেলার সটাউন গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন রিখি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক হোটেলে কাজ নিয়ে হরিয়ানার যমুনানগরে যায় সেই সময়ের কিশোর। একদিন সেখান থেকে অম্বালা যাওয়ার পথে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েন তিনি। প্রাণে বাঁচলেও, ভুলে যান সবকিছু। তিনি কে, কোথায় বাড়ি, মা-বাবার পরিচয় সবকিছুই ভুলে যান রিখি। এই অবস্থায় পরিবারের সন্ধান না পেয়ে, তাঁর এক বন্ধু রিখিকে নিজের কাছেই রেখে দেন। নতুন নাম দেন রবি চৌধুরী। সেই নাম নিয়ে নতুন করে পথচলা শুরু করে রিখি।
অতীতের কোনও স্মৃতি না রেখে, রিখি মুম্বইতে চলে যান। ছোটখাটো চাকরিও জুটিয়ে ফেলেন। কয়েকবছর পর স্থানীয় একটি কলেজে কাজ পান। তারপর থেকে মহারাষ্ট্রের নান্দেদে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পরে বিয়েও করেন। তাঁর দুই সন্তানও রয়েছে। ১৬ বছর বয়সে ঘটা দুর্ঘটনার আগের জীবন ভুলে নতুন পরিচয় বেশ কাটছিল রিখি ওরফে রবির জীবন।
কিন্তু ভাগ্যদেবতা অন্য কিছু চেয়েছিলেন! ৬১ বছর বয়সে ফের দুর্ঘটনার মুখে পড়েন বরি। তবে এবার শাপে বর হয়। দ্বিতীয়বার মাথার আঘাত পুরনো ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়তে থাকে তাঁর। নদী, পুরনো আমগাছ, গ্রামের সরুপথ, বাড়ির উঠোনের বিবর্ণ ছবি ভাসতে থাকে চোখের সামনে। সেই কথা জানান স্ত্রী ও তাঁকে নতুন নাম দেওয়া সেই বন্ধুকে।
এরপরই শুরু খোঁজাখুঁজি। নিজের ছেলেবেলার গ্রাম খুঁজতে সাহায্য নেন এক কলেজ পড়ুয়ার। গুগলে নদী গ্রাম খুঁজতে খুঁজতে তারা সটাউন গ্রামের ক্যাফের ফোন নম্বর খুঁজে পায়। রিখি সেই নম্বরে ফোন করে গ্রামের প্রবীণ রুদ্র প্রকাশ নামে একজনের সাথে যোগাযোগ করে। খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রিখির এক আত্মীয়, এম কে চৌবে সেই কথা জানতে পারেন। কথা হয় তাঁদের। ফিরতে থাকে পুরনো স্মৃতি। অবশেষে ১৫ নভেম্বর রিখি তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।
এই ঘটনায় গ্রামে যেন উৎসব! গান বাজিয়ে, ফুল ছিটিয়ে রিখি স্বাগত জানান গ্রামবাসীরা। এতদিন মৃত বলে মনে করা রিখিকে খুঁজে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর ভাইবোনেরা। রিখিকে রবি নাম দেওয়া বন্ধু বলেন, "এরকম ঘটনা বিরল।" মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আদিত্য শর্মা বলেন, "কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। তবে আঘাত লাগার পর পুরনো স্মৃতি ফিরে এসেছে এঘটনা খুবই কম। চিকিৎসার পর পুরো বিষয়টি জানা যাবে।"
