shono
Advertisement

সিনেমা নয়, বাস্তবে আজও জাদুঘরে বন্দি অ্যানাবেল! বিশ্বজুড়ে রয়েছে আরও ভূতুড়ে পুতুল

এই সব ভূতুড়ে পুতুলদের 'কাণ্ডে' হাড় হিম হয়ে যায়।
Posted: 05:06 PM Oct 28, 2022Updated: 06:02 PM Oct 28, 2022

বিশ্বদীপ দে: ‘পুতুল’ শব্দটা উচ্চারণ করলেই কেমন একটা আদুরে অনুভূতি হয়। শৈশবের রঙিন দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। কিন্তু সত্যিই কি পুতুল মানে কেবল আহ্লাদি, নরম ছেলেমানুষির সামগ্রীবিশেষ? এমনটা ভেবে থাকলে একবারটি ঘুরে আসতে পারেন মার্কিন মুলুকের এক অতিপ্রাকৃত জাদুঘর থেকে। সেদেশের মুডাস কানেক্টিকাটের ‘লরেন ওয়ারেনস অকাল্ট মিউজিয়ামে’ রয়েছে একটি পুতুল। নেহাতই নিরীহদর্শন, হাসিমুখের সেই পুতুলকে ঘিরে জমে থাকা ভয়ের গল্পগুলো শুনলে হাড়হিম হয়ে যায়। অবশ্য সেটাকে ‘গল্প’ বলে মানতে নারাজ প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই পুতুলকেই সেলুলয়েডে ‘অ্যানাবেল’ (Annabelle) নামে আমরা চিনি। সামনেই হ্যালোউইন (Halloween)। ক’দিন আগেই আমরা পেরিয়ে এসেছি ভূত চতুর্দশী। এই ভয়ের মরশুমে ফিরে দেখা যাক সত্য়িকারের ভৌতিক পুতুলের রোমাঞ্চকর কাণ্ডকে।

Advertisement

এই গল্পের সূত্রপাত গত শতাব্দীর সাতের দশকে। ডোনা নামের এক তরুণী নার্স একটি পুতুল উপহার পান। তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর সঙ্গে থাকতেন আরেক বান্ধবী অ্যাঞ্জি। মিষ্টি দেখতে ওই পুতুলটিকে পেয়ে বেশ আহ্লাদই হয়েছিল ডোনার। কিন্তু সময় গড়াতেই শুরু আসল খেলা। তিনি এবং অ্যাঞ্জি দু’জনেই খেয়াল করেন পুতুলটা ঠিক ‘স্বাভাবিক’ নয়। থেকে থেকেই সেটার পজিশন বদলে বদলে যায়। এমনকী এক ঘরে রাখা হলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় অন্য ঘরে। একদিন তাঁরা খুঁজে পেলেন ‘হেল্প মি’ লেখা একটা নোট। একেবারে শিশুর হাতের লেখায়। একদিন দেখা গেল চোখের কোণ থেকে উপচে পড়ছে রক্তের ধারা! স্বাভাবিক ভাবেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে শুরু করলে স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। ডোনা ও তাঁর বান্ধবীও প্রবল ভয় পেয়ে গেলেন।

এই সেই সত্যিকারের অ্যানাবেল

ক্রমে সময় যত গড়াল তত চড়ল আতঙ্কের পারদ। একদিন অ্যাঞ্জির বয়ফ্রেন্ড লউ ভয়ার্ত কণ্ঠে শোনালেন তাঁর হাড়হিম অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন, মাঝরাতে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন তিনি। সারা শরীর ভয়ে ঠান্ডা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর শরীর বেয়ে কে যেন ওঠার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে তাঁর গলা টিপে ধরার! আর সেই ঘাতক কোনও মানুষ নয়, তার শরীরটা এক পুতুলের!

লউ যখন এসব গল্প শোনালেন প্রেমিকাকে, তখন আর ব্যাপারটাকে ‘মনের ভুল’ বলে থামিয়ে রাখতে রাজি হলেন না অ্যাঞ্জিরা। তাঁরা দ্বারস্থ হলেন এক মিডিয়ামের। মিডিয়াম মানে যাঁরা ইহজগতে থেকেও অতিপ্রাকৃতের দুনিয়ার সংকেতকে ধরতে পারেন। সেই মিডিয়ামই তুলে ধরলেন এক হতভাগ্য শিশুকন্যার কথা। অ্যানাবেল হিগিন্স নামের সেই সাত বছরের শিশুটি মারা গেলে তার আত্মাকে বন্দি করা হয়েছে ওই পুতুলের মধ্যে! যদিও মিডিয়াম দাবি করলেন, এই আত্মা নেহাতই নিরীহ। কোনও ক্ষতি করার ইচ্ছে এর নেই।

এড ও লরেন ওয়ারেন

আর এই সময়ই আসরে অবতীর্ণ হলেন এড ও লরেন ওয়ারেন। এই দম্পতির কথা সারা পৃথিবীর অতিপ্রাকৃতের চর্চাকারী মাত্রেই জানেন। একের পর এক ‘ভূতূড়ে’ ঘটনার পিছনে থাকা অলৌকিক কারণ খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করতেন তাঁরা। হালফিলের ‘কনজুরিং’ সিরিজের ছবিগুলি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বিলক্ষণ চিনবেন তাঁদের। অ্যানাবেল নামের পুতুলটিকে পরীক্ষা করে এই দম্পতি জানিয়ে দিলেন, মোটেই এই পুতুলটি ‘নিরাপদ’ নয়। এর মধ্যে রয়েছে শয়তানের উপস্থিতিও। বাড়িটিতে ‘ভূত তাড়ানোর শুদ্ধিকরণ’ করে অ্যানাবেলকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান তাঁরা।

গল্পের এখানেই শেষ নয়। লেখার শুরুতেই কানেক্টিকাটের যে অকাল্ট মিউজিয়ামের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই ঠাঁই পেয়েছে পুতুলটি। কিন্তু কাঁচের আলমারিতে বন্ধ অবস্থাতেও সে নাকি ‘খেল’ দেখিয়েছে। এক ব্যক্তি তাঁর আলমারির দরজায় নাকি ধাক্কা দিয়েছিল। ফেরার পথেই ঘটে যায় ভয়ংকর বাইক দুর্ঘটনা। এমন ঘটনা আরও রয়েছে।

এই হল অ্যানাবেলের গল্প। কিন্তু ভূতুড়ে পুতুলের গল্প এখানেই শেষ নয়। বরং বলা যায়, এ নেহাতই হিমশৈলের চূড়া। এমন কত শত পুতুল যে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে! কোনও অবিশ্রাম ঝড়ের রাতে কিংবা কনকনে শীতের সন্ধেয় আসর গরম করতে তাদের জুড়ি নেই। আর এই পুতুলদের গল্পের সবচেয়ে ভয়ংকর পুতুল কিন্তু অ্যানাবেল নয়। তার নাম রবার্ট। ‘রবার্ট দ্য ডল’ অবশ্য আজকের পুতুল নয়। ১৯০৫ সালে মার্কিন দ্বীপশহর কি ওয়েস্টে জিন নামের এক চার বছরের শিশুর হাতে এসেছিল পুতুলটি। প্রমাণ আকারের সেই পুতুলটিকে ঘিরে জন্ম নিতে থাকে আশ্চর্য সব ঘটনা। রবার্টের জন্য একটা খুব ছোট্ট টেডি থেকে আসবাব আরও কত কী জোগাড় করেছিল জিন। যেখানেই যেত পুতুলকে কাছছাড়া করত না সে। অচিরেই বাড়ির লোক তো বটেই বাড়ির সামনে হেঁটে চলা লোকজনও বুঝতে পারলেন, রবার্ট মোটেই সুবিধের পুতুল নয়। অনেকেই দাবি করতে লাগলেন, সে নাকি হেঁটে হেঁটে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে ফিরে বেড়ায়। এমনকী কেউ কথা বললে তার মুখের অঙ্গভঙ্গিও নাকি বদলে যায়। যেন সে মন দিয়ে শুনছে!

‘রবার্ট দ্য ডল’

জিন বড় হয়ে বিয়ে করে। তারপর কালের নিয়মেই একদিন মারাও যায়। রবার্ট কিন্তু তখনও ছিল। পরে তাকে এক মিউজিয়ামে স্থান দেওয়া হয়েছে। শোনা যায় সেখানেও নাকি এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চলেফিরে বেড়ায় সে। নানা অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটিয়েছে সে। তাই তাকেই সবচেয়ে ভয়ংকর পুতুলের তকমা দেওয়া হয়।

ভৌতিক পুতুলের কথা বলতে বসলে কথা বলা পুতুলের গল্পই বা বাদ যায় কেন? সত্যজিৎ রায়ের ‘ভুতো’ মনে আছে? ভেন্ট্রিলোকুইস্ট অর্থাৎ যাঁরা এই খেলা দেখান তাঁরা কায়দা করে হাতে ধরা পুতুলদের গলাতেও মিশিয়ে দেন নিজেদের স্বর। কিন্তু সব সময় কি আর তারা জাদুকরদের নিয়ন্ত্রণে থাকে? সেই পুতুলই এমন সব কথা বলে ওঠে, আচরণ করে বসে যার কোনও ‘ক্লু’ও বেচারা জাদুকরের হাতে থাকে না! ঘনিয়ে ওঠে ঘোর রহস্যের ঘনঘটা।

‘ডেড সাইলেন্স’ ছবির সেই পুতুল ‘বিলি’

ছোটরা তো বটেই বড়রাও এই খেলা দেখে মজা পান। কিন্তু কালো জাদুর জগতে এই কথা বলা পুতুলরা সাক্ষাৎ শয়তানের চর! মধ্যযুগের ভেন্ট্রিলোকুইস্টদের দাবি, তাঁরা আত্মা বা অন্য অপশক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে এই পুতুলদের মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেন। ‘ডেড সাইলেন্স’ নামের ছবিতে মেরি শ নামের সেই জাদুকরীকে মনে পড়ে? তার ঘরভরতি পুতুলদের নিয়েই সে খেলা দেখাত। কিন্তু পুতুলগুলি নেহাতই ‘নিষ্প্রাণ’ ছিল না। তাদের মধ্যে আসলে বাসা বেঁধেছিল বিদেহীরা! এই গল্পের উৎস খুঁজতে গেলেও এমনই নানা অতিপ্রাকৃতের চর্চাকারীদের সন্ধান মিলবে।

এমন সব গল্পের মজা হল, এর শেষ নেই। অবিশ্বাসীরা উড়িয়ে দেবে। বিশ্বাসীরা চায়ের কাপে তুফান তুলবে। কিন্তু আড্ডার আসরে এমন গল্প উঠলে দল বেঁধে হাঁ করে শুনবে সকলেই। লীলা মজুমদার মোক্ষম কথাটি বলে গিয়েছিলেন। বাঘ, চোর বা প্রেমের গল্পের মতো ভূতের গল্পেরও জুড়ি নেই। আর সেই গল্প যদি হয় ভূতুড়ে পুতুলের, তখন যে তার আবেদন কতটা রোমাঞ্চকর হতে পারে, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার