বছর আসে বছর যায়। আর রেখে যায় নানা মজার স্মৃতি। সোশাল মিডিয়ার হাত ধরে নিমেষে ভাইরাল হয় কিছু ঘটনা। আবার কোনও অজানা মুখ রাতারাতি হয়ে ওঠে সেনসেশন। জীবনের হাজারো জটিলতা, সমস্যার মাঝেও কখনও মন ভালো করার রশদ জোগায় এই সব ভিডিও, আবার কখনও বিতর্কে পা দিয়ে হয়ে ওঠে চর্চার বিষয়। বছর শেষে এমনই কয়েকটি ভাইরাল গল্প ফিরে দেখছে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
নাটু নাটু: বিশ্বমঞ্চে ভারতের জয়জয়কার। এবছর অস্কার জিতে নেন ‘RRR’ সিনেমার ‘নাটু নাটু’ গানের সুরকার এম এম কিরাবাণী। যে গান আট থেকে আশি, প্রত্যেকের মুখেই শোনা গিয়েছিল। খেলার মাঠ থেকে, রাজনীতির মঞ্চ কিংবা পুজোর থিম সং- সর্বত্রই ছিল ‘নাটু নাটু’ ম্যাজিক।
মেট্রোর বিকিনি গার্ল: বছরভর চর্চায় ছিল দিল্লি মেট্রো। রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেতে মেট্রোয় উঠে নানারকম ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে তরুণ প্রজন্ম। তবে বাকিদের ছাপিয়ে গিয়েছিলেন এক তরুণী। যিনি সামান্য কাপড়ে গোপনাঙ্গ আবৃত করে রেখে শোরগোল ফেলে দেন। যে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্ক আর সমালোচনাও কম হয়নি।
কোহলি-গম্ভীর বিবাদ: চলতি বছর আইপিএলে ফের প্রকাশ্যে আসে কোহলি-গম্ভীর তিক্ততা। বিগে আরসিবি-লখনউ ম্যাচে দেখা যায়, বার বার লখনউয়ের উইকেট পড়ার পরেই উত্তেজিত হয়ে সেলিব্রেট করেন বিরাট। ম্যাচের শেষে লখনউয়ের ওপেনার কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে কথা বলছিলেন বিরাট। তখনই মেয়ার্সকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন গম্ভীর। এরপর বিরাটের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় লখনউয়ের আফগান পেসার নবীন উল হকের। খানিক পর আবারও বিরাটকে কিছু একটা বলে এগিয়ে যান গম্ভীর। বিরাটও পালটা কিছু বলেন লখনউ মেন্টরকে। তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। কোনও মতে দুই দলের সদস্যরা তাঁদের সরিয়ে দেন। সেই ঝামেলা নিয়ে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত আলোচনা হয়।
[আরও পড়ুন: সল্টলেকের ইডি দপ্তরে পি সি সরকার জুনিয়র, চিটফান্ড মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ]
পছন্দের সাবজেক্ট: স্কুলে তোমার পছন্দের সাবজেক্ট কী? সাংবাদিকের প্রশ্নে ছাত্র বলে উঠল, ‘বেগুন’! এহেন ভিডিও দেখে হেসে খুন নেটিজেনরা। এখানেই শেষ নয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম জিজ্ঞেস করা হলে ওই ছাত্র বলে, “মোদি সরকার।” কিশোরের কথাবার্তা শুনে তাজ্জব প্রত্যেকেই। এই ভিডিও তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছে সকলেই।
লুকিং লাইক আ ওয়াও: অনলাইনের যুগে নিজেদের ব্যবসার প্রচারের জন্য অনেকেই কাজে লাগান সোশাল মিডিয়াকে। আর সেই প্রচারে এবছরের তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন জসমিন কৌর। সোশাল প্ল্যাটফর্মে নিজের পোশাকের ব্যবসার প্রচারে তিনি বলেছিলেন, “সো বিউটিফুল, সো এলিগ্যান্ট, জাস্ট লুকিং লাইক আ ওয়াও।” তাঁর বলার ধরন মানুষের এতই পছন্দ হয় যে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়। নামী অভিনেত্রীরাও এই সংলাপ বলে রিলস বানিয়ে ফেলেছিলেন।
গোতিলো খালাসি: নবরাত্রি উপলক্ষে কোক স্টুডিওর ‘গোতিলো খালাসি’ গান হইচই ফেলে দেয় সোশাল মিডিয়ায়। ইনস্টাগ্রাম রিল থেকে ডিস্কো, সব জায়গাতেই এই গানে কোমর দুলিয়েছেন প্রত্যেকে। গুজরাটি গানটির জন্য গায়ক অদিত্য গাদভির প্রশংসা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এক রোমাঞ্চকর জীবনের কথা বলে এই গান। এক মাঝির কথা বলে, যে কিনা নিজের এলাকা থেকে বেরিয়ে গভীর সমুদ্রে নতুন কিছু খোঁজার দিকে এগিয়ে চলেছে।
হলে টাইগার গর্জন: দিওয়ালিতে টাইগার রূপে রুপোলি পর্দায় ফিরেছিলেন সলমন খান। যে ছবি ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। ‘টাইগার ৩’ সিনেমা চলাকালীন মহারাষ্ট্রের নাসিকের এক হলে দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়। একপ্রকার দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেন ভাইজান ভক্তরা। এমন কাণ্ডকারখানা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাকি দর্শকরা। শুরু হয় হুড়োহুড়ি! ঘটনায় গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল বেশ কয়েকজনকে। সেই ভিডিওই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।
মোয়ে মোয়ে: বছরের শেষ দিকে হঠাৎই মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘মোয়ে মোয়ে’। যদিও ইউটিউবে গানটি রয়েছে Dzanum নামে। ৩ মিনিটের গান গেয়েছেন সার্বিয়ান গায়িকা ‘টেয়া ডোরা’। লিরিক্স লিখেছেন Slobodan Velkovic Coby। সার্বিয়ান ভাষায় ‘মোয়ে মোয়ে’ শব্দের অর্থ দুঃস্বপ্ন। অবসাদ, মনখারাপ, দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদির কথা ঘুরেফিরে এসেছে গানের কথায়। রয়েছে উত্তরণের ভাবনাও। ভিডিও ও গান যতই মন খারাপের হোক, জনপ্রিয় গানটিকে নিয়ে রিল বানানোর ধুম পড়ে গিয়েছিল।
জামাল কুদু: এই গানেই সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক রিল তৈরি হয়েছে। ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ববি দেওলের এন্ট্রি সং নিমেষে ভাইরাল হয়েছিল। এটি ইরানের এক জনপ্রিয় গান। মূলত, বিয়ের অনুষ্ঠানেই এই গান গাওয়া হয়। ইরানি কবি বিজান স্মান্দারের লেখা গানটির অর্থ হল, ‘ওই, তোমার কালো চোখের সৌন্দর্যে আমার হৃদয় ভেঙে দিও না। তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছ, আমি মজনুর মতো পাগল হয়ে যাচ্ছি। এভাবে আমাকে হতাশ কোরো না। ওহ আমার মিষ্টি ভালোবাসা।’
রশ্মিকার ডিপফেক: কালো খোলামেলে পোশাকে রশ্মিকা মান্দানা! সোশাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও। কিন্তু জানা যায়, তা আসলে রশ্মিকা নন, অন্যের শরীরে বসানো তাঁর মুখ। ডিপফেক এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কড়া পদক্ষেপ করার কথা জানায় প্রশাসনও। তবে শুধু রশ্মিকা নন, ডিপফেকের ফাঁদে পড়েন আলিয়া ভাট, ক্যাটরিনা কাইফ থেকে সাধারণ মানুষও।
[আরও পড়ুন: দীপিকার ‘ট্রিপল X’ হিরো ভিন ডিজেলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ! দায়ের মামলা]
মোদির এআই: ডিপফেকের জাল থেকে রক্ষা পাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি জানিয়েছিলেন, সোশাল মিডিয়ায় তিনি দেখেছেন তিনি নাকি কোনও এক অনুষ্ঠানে গান গাইছেন। ডিপফেক যে রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাও স্বীকার করেন তিনি।