শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: দাম্পত্য কলহের প্রভাব এসআইআরের কাজে! এমনই অবাক করা ঘটনার সাক্ষী মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানা এলাকার পিল্কি গ্রামে। ঝগড়াঝাঁটির জেরে স্বামীকে ছেড়ে দেড় বছর আগে বাপের বাড়ি চলে যাওয়া স্ত্রীকে শিক্ষা দিতে ভোটার তালিকায় তাঁকে 'মৃত' বলে উল্লেখ করলেন বিএলও! এতে অবাক স্ত্রী প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান সাগরদিঘির বিডিও। ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে এভাবে ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিশোধ নেওয়া হল! বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায়।
সাগরদিঘি থানার বালিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের পিল্কি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাকর মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী টুম্পা দাস মণ্ডল। দেড় বছর আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য অশান্তির জেরে টুম্পাদেবী ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়েন। অশান্তি মেটাতে থানা, পুলিশ, আদালতের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। পার্শ্বশিক্ষক স্বামীর কাছে ফেরেননি টুম্পাদেবী। এবার বিএলও-র দায়িত্ব পেয়ে তারই প্রতিশোধ নিতে এসআইআরে ভোটার তালিকায় স্ত্রীর নামের পাশে 'মৃত' লিখে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে স্বামী প্রভাকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন স্ত্রী। গত ৪-৫ বছর ধরে প্রভাকর মণ্ডল সাগরদিঘির ১৪৯ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে কাজ করছেন। শুধুমাত্র স্ত্রীকে হেনস্তা করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটার তালিকায় 'মৃত' দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এনিয়ে সাগরদিঘির বিডিও, জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসক এবং মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকে জানিয়েছেন টুম্পা দাস মণ্ডল।
টুম্পাদেবী জানিয়েছেন, "দেখাশোনা করে প্রায় বারো বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন কারণে আমার স্বামী আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেড় বছর আগে আমি একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসি। সন্তান কার কাছে থাকবে এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে স্বামীর গন্ডগোল চলছে। বছর খানেক ধরে আমাদের সমস্যা নিয়ে আমরা একাধিকবার পুলিশ এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমাদের সমস্যা এখনও মেটেনি। আমার স্বামীর সঙ্গে এখনও বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা না হওয়ায় আমি সাগরদিঘির শ্বশুরবাড়ি গ্রামের বুথের ভোটার তালিকা থেকে থেকে নিজের নাম বাবার বাড়ির বুথের ভোটার তালিকায় সরিয়ে নিয়ে যায়নি। ২০০২ সালে আমার ভোট দেওয়ার বয়স না হওয়ায় সেই সময় আমার ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। বর্তমান ভোটার তালিকায় আমার নাম রয়েছে কিনা তা খোঁজ করতে গিয়ে আমি জানতে পারি ভোটার তালিকায় আমার নামের পাশে 'ই' (Expired) অর্থাৎ 'মৃত' বলে লেখা রয়েছে।''
এপ্রসঙ্গে সাগরদিঘির বিডিও শতাংশুনাথ চক্রবর্তী জানান, ''টুম্পাদেবীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি প্রকৃতপক্ষে 'মৃত' দেখিয়ে তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। টুম্পাদেবীর স্বামী এসআইআর শুরুর আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বুথেরর বিএলও হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। সেই কারণে আমরা ধরেই নিচ্ছি, এসআইআর শুরু হওয়ার আগেই তাঁকে মৃত দেখিয়ে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এআরও-র তরফ থেকে বিএলও প্রভাকর মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হচ্ছে। বিএলও-র উত্তর পাওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। টুম্পাদেবীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কীভাবে ফের তিনি নিজের নাম ভোটার তালিকায় তুলতে পারবেন।''
