সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: প্রেম অমর, অজেয়, বাধাহীন! একথা কে না জানে? প্রেমের ভাষাও বোধগম্য, সে প্রেমিক আর প্রেমিকার মাতৃভাষা যতই একে অপরের কাছে দুর্বোধ্য হোক না কেন। আর সেই ভাষায় বাঁধা পড়েই সেই ব্রাজিল থেকে এই বাংলা - দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন ম্যানুয়েলা আলভেজ দা সিলভা। এসেছেন প্রেমাস্পদ নবদ্বীপের কার্তিক মণ্ডলের কাছে। এসেছেন এই বাংলার বধূ হতে। হ্যাঁ, রূপকথার গল্পের মতোই বাস্তব কাহিনি লেখা হল নবদ্বীপের মাটিতে। কার্তিকের ব্রাজিলীয় প্রেমিকার ম্যানুয়েলা এখন বাঙালি (Bengali) বধূ। বিয়ের আগে বেনারসি শাড়ি, নববধূ বেশে মহড়া হয়েছে। বাংলার জল-মাটি-হাওয়ার সঙ্গে মিশে যেতে চেয়েছেন ম্যানুয়েলা। দুবেলা দিব্যি ভাত-তরকারি-মাছে ভোজন সারছেন। হবু শ্বশুরবাড়িতে ভালোই কাটছে তাঁর দিন।
নবদ্বীপের কার্তিক আর ব্রাজিলের ম্যানুয়েলার শুভ পরিণয়।
নবদ্বীপের কার্তিক মণ্ডল কর্মসূত্রে থাকেন গুজরাটের (Gujarat) সুরাটে। বছর চারেক আগে সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) ম্যানুয়েলার সঙ্গে আলাপ, ধীরে ধীরে প্রেম। কিন্তু ম্যানুয়েলা যে প্রেমের টানে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে দেখতে একদিন সত্যিই সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে বাংলার বুকে পা রাখবেন, কার্তিক কি ভেবেছিলেন? নাহ, ভারচুয়ালের প্রেমকে এতটা বাস্তবে তিনি দেখতে পাননি। তাই তো ম্যানুয়েলা আগমন তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। নবদ্বীপ থেকে ব্রাজিলের (Brazil) দূরত্ব ১৫ হাজার কিলোমিটার। তাতে কী? প্রেমের কাছে তো সমস্ত দূরত্ব অলঙ্ঘনীয়! দুজনকে এক যে হতেই হবে!
[আরও পড়ুন: যোগ দিবসেই জাতীয় যোগ অলিম্পিয়াডে সোনা বাংলার, দলে দিনমজুরের ছেলে]
কার্তিকের বাড়ি এখন বিয়েবাড়ি। প্যান্ডেল, আলোর সাজ, বাজছে সানাই। ব্রাজিলের মেয়ে ম্যানুয়েলাকে বঙ্গবধূ (Bride) করে তুলতে চেষ্টার কসুর করেননি কেউ। ম্যানুয়েলা জানান, শাড়ি পরতে তাঁর ভালোই লাগছে। এখনও পুরোপুরি বঙ্গললনার মতো করে শাড়ি পরছেন। সাজগোজও তেমন। আর খাওয়াদাওয়া? বাঙালির রসনায় তৃপ্ত হয় না, এমন মানুষ তো কমই। বাঙালি ছেলের পাশাপাশি বাংলার হেঁসেলের প্রেমেও পড়ে গিয়েছেন ম্যানুয়েলা। দিব্যি দুবেলা ঝাল-মশলা কম দেওয়া তরকারি, ভাত তৃপ্তি ভরে খাচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: নজরে স্কুলপড়ুয়াদের সর্বাধিক সুরক্ষা, বাস-পুলকারের জন্য নতুন গাইডলাইন পরিবহণ দপ্তরের]
তবে দু মহাদেশের দুই পরিবারের সংযোগ এত সহজে মোটেই হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে ভাষা একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু তাও মোটেই তেমন বাধা নয়। বন্ধু 'গুগল ট্রান্সলেটর' তো আছেই। যেখানে যে ভাষা আটকাচ্ছে, চটপট সমাধানে হাজির গুগল। কার্তিক, ম্যানুয়েলা আর তাঁদের বাড়ির লোকজন ওই অ্যাপ ব্যবহার করেই কথাবার্তা সারছেন সহজভাবেই। বাঙালির সাতপাক, সিঁদুরদান, বিয়ের হাজার একটা অনুষ্ঠান দেখতে আসছেন ম্যানুয়েলার বাবা-মাও। নবদ্বীপের (Nabadwip) মাটি তো আসলে খাঁটি প্রেমেরই। আর সেখানে রচিত কার্তিক-ম্যানুয়েলার মিলনকাব্য।
দেখুন ভিডিও: