সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গ্রামে নেই রাস্তাঘাট, ফলে গাড়ি ঢোকে না। কোথাও যেতে হলে একটাই উপায়, মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটা। এলাকায় পৌছাঁয়নি বিদ্যুৎ, এমনকী মোবাইলের নেটওয়ার্ক মেলে অতি কষ্টে। তবু, ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে নতুন কিছু দেখল উত্তর মহারাষ্ট্রের উদাদ্যা গ্রাম। প্রথমবার জাতীয় পতাকা উড়ল সেই প্রত্যন্ত গ্রামে। একপ্রকার অসাধ্য সাধন করেন গ্রামেরই ২০ বছরের যুবক গণেশ পাভারা। অসাধ্য সাধন কেন? লম্বা খুঁটিতে বেঁধে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়াটি জানা ছিল না গণেশ-সহ গ্রামের কারও। খারাপ নেটওয়ার্কের মধ্যেই মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখে গণেশ তা শেখেন। এবং ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন।
১৫ আগস্ট সকালে গণেশ ৩০ জন শিশু এবং অন্য গ্রামবাসীদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দার এই প্রত্যন্ত গ্রামে এতদিন কোনও সরকারি স্কুল বা গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা অফিস না থাকায় সাত দশক ধরে পতাকা উত্তোলনের আয়োজনই হয়নি। যা এদিন করে দেখালেন গণেশ পাভারা। কিন্তু কে এই গণেশ পাভারা?
তিনি স্থানীয় এক এনজিও পরিচালিত স্কুলের শিক্ষক। চারটি গ্রামে স্কুল চালায় এই এনজিও। গণেশ ও তাঁর সহকর্মীরা এ বছর সিদ্ধান্ত নেন উদাদ্যা, খাপরমাল, সাদরি ও মঞ্জনিপাড়া—এই চারটি গ্রামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। চারটি স্কুলের সব মিলিয়ে শিশু-সহ ২৫০ জন গ্রামবাসী স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামবাসীদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই এনজিওর এই প্রচেষ্টা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, গ্রামের আদিবাসীরা স্বাধীনভাবে জীবন নির্বাহ করেন, কিন্তু সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সম্পর্কে সবার পূর্ণ ধারণা নেই। ফলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় বা দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের অনেক সময় ঠকতে হয়।
উত্তর মহারাষ্ট্রের অনেক গ্রামেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছোয়নি। কোথাও কোথাও মানুষ সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভর করেন। এমনও গ্রাম আছে যেখানে রাস্তাঘাটও নেই, গাড়ি চলে না। কোথাও যেতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে যেতে হয়। অথবা নির্ভর করতে হয় নর্মদা নদীপথের নৌকায়। গ্রামবাসীরা বলছেন, শিক্ষার অভাবই এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাঁরা চাইছেন আগামী প্রজন্ম যেন আজকের কষ্টে না ভোগে। তারা যেন পিছিয়ে পড়ার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়।
