shono
Advertisement
Dragon

পৃথিবীর ইতিহাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আগুনমুখোর 'কীর্তি'! সত্যিই আছে ড্রাগন?

কোথাও তারা শয়তান, কোথাও রক্ষাকর্তা!
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:54 PM Nov 30, 2025Updated: 06:01 PM Nov 30, 2025

বিশ্বদীপ দে: ড্রাগন। নিঃশ্বাসে যার আগুন। চোখ জ্বলে ভাটার মতো। এমন এক দানবকে ঘিরে আগ্রহ দুনিয়াজুড়ে। সর্বত্র অবশ্য শয়তান নয়, অনেক জায়গায় ড্রাগন দেবতাও। প্রাচীন পৃথিবীর কিংবদন্তি থেকে জনপ্রিয় সাহিত্য, ড্রাগন আছে সবখানেই। এ এক বিস্ময়। নানা দেশ, নানা সংস্কৃতি... কী করে সকলেই চিনে নিল ড্রাগনকে? সত্যিই কি কখনও পৃথিবীতে ঘুরে বেড়িয়েছে অগ্নিনিঃশ্বাসী প্রাণীটি?

Advertisement

এমন কথা কল্পনাবিলাসীরা ভাবতেই পারেন। কিন্তু সত্যিটা হল এখনও পরিষ্কার নয়, কেন বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ড্রাগন আবির্ভূত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, হয়তো এর নেপথ্যে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক ফসিলস! প্রাচীন যুগের মানুষেরা সম্ভবত পৃথিবীর গায়ে থেকে যাওয়া সুদূর অতীতের অতিকায় ডাইনোসোর-সহ নানা প্রাণীর দেহ-আকৃতির সন্ধান পেয়েছিল পাথরের খাঁজে-ভাঁজে। আবার এমনও হতে পারে স্বাভাবিক মাপের থেকে বড় জানোয়ার দেখার বিস্ময় থেকেও ড্রাগন সৃষ্টি হয়েছে শিল্পীর কল্পনায় ভর দিয়ে। আজও সারা পৃথিবীর মানুষ ঘড়িয়াল কিংবা বিরাট কুমির দেখে হাঁ হয়ে যায়। এই বিস্ময়ই হয়তো পৃথিবীর নানা দেশে, সমাজে ড্রাগনের মতো প্রাণীর জন্মের কারণ হয়ে উঠেছে।

কোথাও ড্রাগন আস্ত ঘোড়াকে গিলে নেওয়া ভয়াল ভয়ংকর প্রাণী! যারা সোনা জমায়। আবার কোথাও তাদের ভূমিকা রক্ষাকর্তার। তারা বৃষ্টি আনে, জনপদকে সুরক্ষা দেয়। প্রাচীন চীন থেকে মধ্যযুগীয় ইউরোপ, কিংবা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া- ড্রাগন সর্বত্র বিরাজমান। মজার কথা হল, পৌরাণিক আখ্যান থেকে শিল্পকলা- ড্রাগনকে কল্পনা করা হয়েছে সাপ, সিংহ, নেকড়ে, পাখি, টিকটিকি এবং কুমিরের বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করে। এরা সাঁতার কাটতে পারে। সেই সঙ্গেই উড়তেও ওস্তাদ। জলে-স্থলে তো বটেই আকাশপথেও অবাধ বিচরণ। ‘হ্যারি পটার’, ‘লর্ড অব দ্য রিংস’, ‘হবিট’... বিশ্ব কাঁপানো সাহিত্যে অবধারিত ভাবেই এসে পড়েছে ড্রাগনেরা। তবে সেসব অনেক পরে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে অবস্থিত ড্রাগন কীভাবে সেখানকার সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে।

ঠিক ড্রাগন নয়, তবে ড্রাগন-সদৃশ প্রাণীদের দেখা মেলে মেসোপটেমিয়ার সংস্কৃতিতে। সেই কোন আদ্যিকালের পৃথিবীতে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতায় জন্ম নিয়েছিল মুশুস্সু। চারপেয়ে সাপ-সদৃশ এই প্রাণীর দীর্ঘ জিভ এবং এক ছোবলেই ছবি! সুতরাং একদিকে সে 'দুর্ধর্ষ দুশমন'। অন্যদিকে আপনার পক্ষে থাকলে দুরন্ত এক রক্ষাকর্তা। ব্যাবিলনের দেবতা মারডুকের বাহন! এদিকে পারস্যের সাহিত্য-শিল্পেও দেখা মেলে ড্রাগনের। এশীয় উপকথার কাল্পনিক প্রাণী আজদাহার জন্ম এখানে। জলে সাঁতার, মাটিকে পায়চারি- সবেতেই সিদ্ধহস্ত। আবার ডানাও রয়েছে ভাঁজ করা।

কিন্তু ড্রাগন বললে সবচেয়ে আগে যে দেশের কথা মনে পড়ে সেটা হল চিন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখব চিনের ড্রাগনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ছিল রাজশক্তির! আসলে রাজশক্তির প্রতীক ছিল ড্রাগন। চিনের হান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা লিউ ব্যাংয়ের জন্মের আগে তাঁর মা স্বপ্নে ড্রাগন দেখেছিলেন। অন্যদিকে টাং সাম্রাজ্যের সম্রাটরা ড্রাগনের মোটিফ আঁকা পোশাক পরতেন। আবার ইউহান সাম্রাজ্যে পাঁচটি থাবাযুক্ত ও দুই শিংওয়ালা ড্রাগনের অধিকারী হিসেবে দেখানো হত 'স্বর্গের পুত্র' স্বয়ং সম্রাটকে। রাজকন্যা ও মহান ব্যক্তিদের জন্য ছিল চার থাবাওয়ালা ড্রাগন। অর্থাৎ এখানে ড্রাগন 'পজিটিভ' এক শক্তি।

প্রাচীন চিনা চিকিৎসা শাস্ত্রে মেলে এমন এক উপাদানের কথা যার নাম 'ড্রাগন বোনস'! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, সেটা কী বস্তু? সত্যিই ড্রাগনের হাড়গোড় নাকি? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসল বিষয়টা হল ফসিলস। মাটি খুঁড়ে পাওয়া সেকালের জীবজন্তুদের হাড়গোড়কে ওই নামেই ডাকা হত। পরে অবশ্য ধারণা করা হয়, অন্য কোনও প্রাণী নয়, পিকিং মানুষের দেহাবশেষের হাড়কেই কাজে লাগানো হত চিকিৎসা শাস্ত্রে। এদিকে গত বছর চিনের গুইঝাউ প্রদেশে এক এমন লম্বা গলা ড্রাগনের সন্ধান মিলেছে যার সঙ্গে কল্পনার ড্রাগনের মস্ত মিল! মনে করা হচ্ছে, হয়তো প্রাচীন চিনে মাটি খুঁড়ে এমন প্রাণীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন সেকালের মানুষেরা। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকেই ড্রাগনের কল্পনায় মিশে যায় প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জলছাপ! টোলটেক, অ্যাজটেক ও মায়া সভ্যতাতেও ড্রাগন এক সর্বশক্তিমান। মনে করা হত, ড্রাগনই সৃষ্টি করেছে এই বিশ্ব!

এমন ভাবেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ড্রাগনেরা ফিরে ফিরে এসেছে। এমনকী আজকের পৃথিবীতেও আমরা তাদের চলাফেরা করতে দেখি। ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ড্রাগনের কথা হচ্ছে। তবে আদপে এই প্রাণীকে যেমনই দেখতে হোক, আসলে সে বৃহৎ গোসাপ জাতীয় প্রাণী। তার নিঃশ্বাসে আগুন নেই। নেই কোনও দৈবী শক্তি। তবে তাকে দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়। মনে পড়ে যায় ড্রাগনের কথা। আবার ১৯০৯ সালে মেরিল্যান্ডের একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে 'বিশাল ডানা, লম্বা সূক্ষ্ম ঠোঁট, স্টিলের হুকের মতো নখ এবং কপালের মাঝখানে একটি চোখ'-সহ একটি প্রাণীর দেখা মিলেছে। এভাবেই কখনও সম্পূর্ণ কল্পনা, কখনও গুঞ্জন, কখনও কোমোডো ড্রাগনের মতো বাস্তব প্রাণীর অবয়বে ভর করে এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতি ছুঁয়ে ড্রাগনেরা রয়ে গিয়েছে। কে বলে তারা কাল্পনিক?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • নানা দেশ, নানা সংস্কৃতি... কী করে সকলেই চিনে নিল ড্রাগনকে?
  • সত্যিই কি কখনও পৃথিবীতে ঘুরে বেড়িয়েছে অগ্নিনিঃশ্বাসী প্রাণীটি? এমন কথা কল্পনাবিলাসীরা ভাবতেই পারেন।
  • কিন্তু সত্যিটা হল এখনও পরিষ্কার নয়, কেন বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ড্রাগন আবির্ভূত হয়েছিল।
Advertisement