shono
Advertisement

যুদ্ধের ময়দান বদলালেও, সংগ্রাম বদলায়নি শোভারানির! কিন্তু কীভাবে?

সেন্টার ফরোয়ার্ড থেকে কাগজের হকারি!
Posted: 11:36 AM Dec 02, 2023Updated: 11:56 AM Dec 02, 2023

প্রসূন বিশ্বাস, ভুবনেশ্বর: তখনও সূর্য উঁকি দেয়নি। শীতের ভোরে শিরশিরে হাওয়ায় ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। আকাশের চাঁদের আলো তখনও পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়নি। ভুবনেশ্বর মাস্টার ক্যান্টিন অঞ্চলে সেই কাকভোরে কয়েকশো কাগজের হকারের ব্যস্ততা চরমে। প্রতিদিন সকালেই বিভিন্ন এজেন্সি থেকে কাগজ নিয়ে ভুবনেশ্বর শহরের বাড়ি বাড়ি ছোটার তোড়জোড় শুরু করেন কাগজের হকাররা। এই ভোরে অন্যান্যদের মতো হন্তদন্ত হয়ে তিনিও এলেন, তারপর ছুটলেন সার দিয়ে বসে থাকা এজেন্সির লোকেদের কাছে। সেখান থেকে একের পর এক কাগজ সংগ্রহ করে মাটিতে বসেই কাগজগুলো গোছাতে শুরু করলেন। এই শয়ে শয়ে পুরুষ হকারের মধ্যে একমাত্র মহিলা কাগজের হকার এই রাজ্যের!

Advertisement

শুধুই কি এটাই তাঁর পরিচয়? ওড়িশা মহিলা ফুটবলের অন্যতম প্রাক্তন ফুটবলার শোভারানি দাস, যিনি প্রথম ওড়িশা মহিলা ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। ফুটবলের পাশাপাশি খোখোতেও একাধিকবার জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন ওড়িশার হয়ে। তিনি এখন এভাবেই জীবন যাপন করছেন।

সালটা ১৯৯২। তৎকালীন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রথমবার সিকিমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মহিলাদের ফেডারেশন কাপে অংশ নেবে। তখন ফেডারেশন সভাপতি ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। কিন্তু ওড়িশায় মহিলা ফুটবল দল নেই। তখন কয়েকজন জাতীয় স্তরে খেলা ওড়িশার খোখো খেলোয়াড়দের আলাদা ট্রেনিং করিয়ে ফেডারেশন কাপে পাঠানো হবে। সেই সিদ্ধান্তের পরই ওড়িশার খোখো খেলোয়াড় শোভারানি এলেন রাজ্য ফুটবল দলে। সেখান থেকেই ডাক ফুটবলে। তারপর খোখো থেকে হয়ে গেলেন ফুটবলার। প্রথম ফেডারেশন কাপে ওড়িশা পৌঁছেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। তারপর থেকে রাজ্যের হয়ে টানা অংশ নিয়েছেন ফেডারেশন কাপে।

[আরও পড়ুন: রোহিতদের হেডস্যর যখন দর্শক! ছেলের খেলা গ্যালারিতে বসে দেখছেন দ্রাবিড়]

কিন্তু ওড়িশা দলের প্রাক্তন সেন্টার ফরোয়ার্ড কেন হঠাৎ এলেন কাগজের হকারির এই পেশায়? মাস্টার ক্যান্টিন অঞ্চলের মাটিতে বসে কাগজ গুনতে গুনতে এই প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার বলছিলেন, “আমার স্বামীর ২০০৩ সালে একটি অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর আর্থিক সমস্যায় পড়ে যাই, যেহেতু তিনি এই কাগজের হকার ছিলেন, সেই সময় আমার কাছে আর বিকল্প পথ ছিল না, এই পেশাটাকেই ধরে নিয়েছি। কোনও কাজই ছোট নয়।” প্রথম প্রথম কষ্ট হত, ভোর তিনটেয় ঘুম থেকে ওঠা। তারপর ঘরের কাজ সেরে পাঁচটার মধ্যে মাস্টার ক্যান্টিনে চলে আসা সাইকেল নিয়ে। তারপর শ দুয়েক কাগজ নিয়ে সাড়ে সাতটার মধ্যে লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ফের বাড়ি ফিরে ঘরের কাজ শুরু করা। এই করতে করতেই ক্রমশ ফুটবল থেকে সরে এসেছেন। তবে সময় করে স্থানীয় মাঠে যান, ছোটদের শেখাতে। প্রাক্তন ফুটবলার হিসাবে সাড়ে তিন হাজার টাকার একটা পেনশনও পান।

প্রাক্তন ফুটবলার শোভারানি দাস ও তাঁর সার্টিফিকেট।

তবে ওড়িশা এফসি আইএসএল খেললেও এখনও পর্যন্ত আইএসএল ম্যাচ দেখতে যাওয়া হয়নি মাঠে গিয়ে, সেই আক্ষেপ রয়েছেই। সকাল সকাল বিক্রির জন্য খবরের কাগজ গোছাতে গোছাতে ওড়িশা এফসির খবরে চোখ বুলিয়ে নেন। এবার ইচ্ছা রয়েছে মাঠে গিয়ে ম্যাচ দেখার। ভারতীয় মেয়েরা ফুটবলে এগিয়ে আসছে দেখে খুব খুশি এই বছর ৪৯ প্রাক্তন ফুটবলার। সঙ্গে যোগ করেন, “আমাদের সময় এত খেলা ছিল না। ফেডারেশন কাপটাই বড় টুর্নামেন্ট ছিল। আর প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ খেলে বেড়াতাম। কখন ওড়িশার মধ্যে কখনও আবার বাংলায় এসে। এখন কত সুযোগ সুবিধা। কত টুর্নামেন্ট। খুব ভালো লাগে মেয়েদের এই এগিয়ে যাওয়া দেখে।”

বয়সের সঙ্গে শরীর একটু স্থূল হয়েছে তাঁর। দেখলে আর কেউ বুঝবেন না তিনি একসময় প্রচণ্ড ক্ষিপ্র ছিলেন মাঠের মধ্যে। এই বয়সে ২০০ বাড়ি সাইকেল চালিয়ে কাগজ দিতে একটু সমস্যা হয় বলে বছর কয়েক হল একটা টাকা জমিয়ে স্কুটি কিনেছেন। স্বামী প্রকাশ মিশ্র সুস্থ হয়ে উঠেছেন। শোভারানিকে সাহায্য করেন। তা বলে এই লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেননি। কথায় কথায় কাগজ গুছিয়ে বেঁধে ফেলা প্রায় শেষ। আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার বললেন, “ইস সূর্য উঁকি মেরে দিল আজ। দেরি হয়ে গেল। দুশো বাড়িতে কাগজ ফেলতে হবে।”

কথা শেষ হতে না হতেই স্কুটিটা নিয়ে চোখের নিমেষে হারিয়ে গেলেন শোভারানি আর তাঁর স্বামী প্রকাশ। তখনও অন্য হকাররা কাগজ গোছাতে ব্যস্ত।

[আরও পড়ুন: রোনাল্ডোর ‘গান্ধীগিরি’, ‘মেসি-মেসি’ কটাক্ষের জবাবে চুমু ছুড়লেন পর্তুগিজ তারকা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement