বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও ভাস্কর মুখোপাধ্যায়: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) জঙ্গলমহল সফর এবং আদিবাসীর বাড়িতে মধ্যাহ্ণভোজের ঘটনাকে বিঁধল বাম ও কংগ্রেস। সেইসঙ্গে রাজ্যের শাসকদলকেও একের পর এক দাগল জোট শিবিরের নেতারা। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক ও জাতাপাতের রাজনীতির জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তবে রাজ্যের মানুষ সম্প্রদায়িক ও জাতপাতের রাজনীতির জন্য এই দুই দলকে ক্ষমা করবে না বলে দাবি জোট নেতাদের।
বৃহস্পতিবার জঙ্গলমহলে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি করেন। সেইসঙ্গে দুপুরে আদিবাসী এক পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঠিক তখনই দলিত উৎপীড়ন ইস্যুতে বিধানভবনের সামনে ‘অবস্থান সত্যাগ্রহ’-এ সামিল হয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই সত্যাগ্রহের মঞ্চ থেকে দুই ফুল শিবিরকে নিশানা করে একের পর এক তোপ দাগেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। চাঁছাছোলা ভাষায় বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) সরকারকে। অধীর চৌধুরি (Adhir Chowdhury) তোপ দাগেন, “অমিত শাহ সাম্প্রদায়িক ও জাতপাতের রাজনীতি করতে এসেছেন। আজ যখন দেশজুড়ে আদিবাসীরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, খেতে পাচ্ছে না, তখন অমিত শাহ রাজনৈতিক চমক দিতে আদিবাসী বাড়িতে খেতে গিয়েছেন। এটা সাম্প্রদায়িক বিজেপির চমক। বাংলার মানুষ সেটা জানে। অমিত শাহ দলিতদের ফুঁসলাতে এসেছেন। রাজনৈতিক স্টান্ট দিতে এসেছেন। সবটাই লোক দেখানো রাজনীতি। কারণ ভোট চলে এসেছে। ভোটের সময় সবাই আসে, বড় বড় কথা বলে। তারপর ভুলে যায়।”
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুর ব্যারাজের ভাঙা লকগেট মেরামতির কাজ চলছে এখনও, কবে স্বাভাবিক হবে জল সরবরাহ?]
পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদলের সমালোচনা করে অধীরের অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তৃণমূল সাম্প্রদায়িক ও জাতপাতের রাজনীতি করছে। ফলে সুবিধা হচ্ছে বিজেপির। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করতে মরিয়া তিনি বিজেপির থেকে বড় হিন্দু।” বিজেপি ও তৃণমূল রাজ্যে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করছেন বলে দাবি তাঁর। উত্তর ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৃণমূল এরাজ্যে আমদানি করেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন তিনি। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তাঁর চ্যালেঞ্জ, হিম্মত থাকলে মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিন। বাংলায় তফশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য কতগুলো শূন্যপদ আছে? তা প্রকাশ করুক রাজ্য সরকার। রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট আরও মজবুত হবে। মানুষের জন্য রাজনীতি করি বলে দাবি অধীরের।
অধীর যেখানে শেষ করেন ঠিক সেখান থেকে অভিযোগের ঝুলি নিয়ে হাজির হন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। তাঁর দাবি, “এবার ভোটে তৃণমূল হারবে তা নিশ্চত হয়ে গিয়েছে। তার জন্য অমিত শাহদের কিছু করতে হবে না। মানুষ জানে বড় ঘাস কাটলে পেছন পেছন গরু বেড়া ভেঙে ঢুকবে। তাই তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বাম ও কংগ্রেসের জোটের শক্তি প্রতিদিনই বাড়ছে। অমিত শাহকে সুজনের খোঁচা, “আদিবাসী বাড়িতে খাওয়ার জন্য লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করতে হয় না। হেলিকপ্টার বা প্লেনে করতে আসতে হয় না। তাঁদের পাশে থাকলে প্রতিদিনই খাওয়া যায়।” ভোটের রাজনীতি করতে অমিত শাহ জাতপাতের রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ বাম পরিষদীয় দলনেতার। তাঁর দাবি, অমিত শাহ যদি সত্যি আদিবাসী দরদি হন তাহলে সেই পরিবারের সঙ্গে রাত্রিযাপন করুন। তা না করে তিনি পাঁচতারা হোটেলে থাকবেন। পুরোটাই নাটক বলে অভিযোগ সুজনের।
বিরোধী বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও (Anubrata Mandal)। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ বোকা নয়। গুজরাটের মানুষকে বাংলা মেনে নেবে? বাংলার মানুষের হাত পা নেই? বাংলার মানুষ চলতে পারে না? গুজরাট থেকে লোক আনার কোনও দরকার নেই।” অমিত শাহকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “অমিত শাহ পুজোর সময় দিল্লি থেকে বেড়াতে এসেছেন, কালীঘাট এবং দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে এসেছেন। মাকে ডাকতে এসেছেন। আর পশ্চিমবঙ্গ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর। বাইরে থেকে আসেনিনি। তিনি তাঁর মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে বিধানসভা ভোট এবারের ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট। তাই সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন বাংলার স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিন। একুশের নির্বাচনে ২২০-২৩০টি আসন পাবে তৃণমূল।”