নব্যেন্দু হাজরা, বালেশ্বর: বাতাস ভারী স্বজন হারানোর কান্নায়। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে মৃতদেহের পচা গন্ধ। বালেশ্বরের (Baleswar) বাহানাগা হাই স্কুলে সাফাইকর্মীদের সেদিকে মন নেই। সেখানে একটানা ঘসঘস আওয়াজ। ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল, জলের বালতি, ঝাঁটা নিয়ে নেমে পড়েছেন হাই স্কুলের কর্মীরা। স্কুল বাড়ির মেঝে থেকে জেদি রক্তের দাগ তুলতে হবে তো। শুক্রবার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার (Orissa Train Accident)পর এখানকার ক্লাসরুমগুলোই হয়ে উঠেছিল লাশঘর। থরে থরে
ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে যেখানে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে, সেখান থেকে বাহানাগা হাই স্কুল (Bahanaga High School) মিনিট দুয়েকের পথ। ট্রেন সংঘর্ষে অগুনতি মৃতদেহ পড়ে ছিল লাইন জুড়ে। বগিতে। সেগুলো এনে রাখার জায়গা তো চাই। প্রাথমিকভাবে তাই বাহানাগার এই স্কুলটিকে বেছে নেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। ট্রেনের ধাক্কায় বিকৃত দেহগুলোকে এনে রাখা হয়েছিল শ্রেণিকক্ষে। ধীরে ধীরে মৃতদেহ শনাক্ত করার পর পরিবার-পরিজনদের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখনও শনাক্ত হয়নি অন্তত ১৬০টি মৃতদেহ (Deadbodies)। স্কুলবাড়ি থেকে তা সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালে। রবিবার সকালে শেষ পাঁচটি মৃতদেহ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হয় স্কুল থেকে। সাদা চাদরে চাপা, কিন্তু দেহের অবস্থা এমনই যে সাদা চাদর চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে টপটপ করে।
একশো লাশের সে রক্তের দাগ শুকিয়ে জমে গিয়েছে স্কুলের মেঝে জুড়ে। স্কুল শিক্ষক শশীকান্ত সাহু জানিয়েছেন, ”এখন গরমের ছুটি চলছে স্কুলে। ২০ জুন খুলবে স্কুল। তার আগে আমরা স্কুলকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দিতে চাই।” স্কুলে দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ রাখা হচ্ছে, এমন কথা কানে আসার পরেই প্রমাদ গুনেছিলেন অভিভাবকরা (Gurdians)। রবিবার জনাকয়েক অভিভাবক হালহকিকত দেখতে জড়ো হন স্কুলের গেটে। স্কুল শিক্ষক তাঁদের জানিয়েছেন, আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। শ্রেণিকক্ষে যে মৃতদেহ রাখা হয়েছিল, স্কুল খোলার পর পর তার কোনও চিহ্নই থাকবে না।
[আরও পড়ুন: নদীতে নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে বিপর্যয় বিহারে, ভাইরাল ভিডিও!]
সে রাজ্যের উদ্যানপালন বিভাগের কর্মী বিদ্যুৎ রায়ের নেতৃত্বে কাজ চলছে জোরকদমে। বিদ্যুৎবাবুর চোখেমুখে এখনও সেদিনের আতঙ্ক। জানিয়েছেন, ‘‘সার দেওয়া লাশ পড়ে ছিল পনেরোটা ঘরে। মৃতের সংখ্যা এত যে, রাখতে না রাখতেই ভরে যাচ্ছিল একেকটা ক্লাসরুম।’’ তবে রবিবার বিকেলে দেখা গেল, সেখানে একটাও দেহ নেই। রয়েছে রক্তের আঁশটে গন্ধ। যা ঢাকতে বালতি বালতি ব্লিচিং (Bleaching) দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের কর্মী রতিদা জানিয়েছেন, এরপর স্যানিটাইজ করা হবে গোটা স্কুল। এভাবেই বোধহয় লাশঘর আবার ক্লাসঘরের উপযুক্ত হয়ে উঠবে।