সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুণের লোহেগাঁও। ছকছাঁদহীন এক জনপদ। কাদামাটির পথ পেরিয়ে ঝুপড়ি ঘরে ফিরছে ১৭ বছর বয়সি 'সোনার ছেলে', বুকে ভারতের তেরঙ্গা জড়িয়ে। তার হাতে জ্বলজ্বল করছে সোনার পদক। বলা হচ্ছে সানি ফুলমালির কথা। বাহরিনে সম্প্রতি আয়োজিত হয়েছিল এশিয়ান ইয়ুথ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখান থেকে সোনা জিতে ফিরেছে এই 'বিস্ময় প্রতিভা'।
৬০ কেজি বিভাগে অংশ নিয়ে সোনা জিতেছে সানি। তবে শীর্ষে পৌঁছানোর এই যাত্রা মোটেও সুগম ছিল না। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সানির বাড়ি অস্থায়ী। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি। নেই কোনও দেওয়াল। মেঝেও। মাটিতে বিছানো প্লাস্টিক। একই ছাউনিতে রান্না করেন মা। আবার এক ছাউনিতেই নিদ্রাযাপন। অথচ চারপাশে বড় বড় অট্টালিকা। কোনওটা আবার আন্ডার কনস্ট্রাকশন। বহুতলগুলি যেমন তৈরির প্রক্রিয়ায়, তেমনই যেন উঁচুতে ওঠার জন্য নিজেকে তৈরি করেছে সানি। সেখান থেকেই সাফল্য।
১৫ বছর আগের কথা। মহারাষ্ট্র বিড জেলার অস্থি এলাকা থেকে পুণে চলে আসে সানির পরিবার। জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে তখন থেকে এভাবেই দিনগুজরান। সানির বাবা একটি নন্দী ষাঁড় নিয়ে গ্রাম কে গ্রাম ঘোরেন। মানুষের ভাগ্য বলেন। মা রাস্তার ধারে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র বিক্রি করেন। সানির ভাইও রয়েছে। সুরজ। সব মিলিয়ে চারজনের অভাবী সংসারের উৎস থেকেই উৎসারিত আলোর মতোই সানির সোনা জিতে ফেরা।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, সানির রক্তে কুস্তি মিশে আছে। তার কথায়, “আমার দাদুও কুস্তিগির ছিলেন। আমাকে আর ভাইকে কুস্তির ট্রেনিং দিতেন বাবা। এরপর একটা ক্যাম্পে যাই। সেখানে নজর পড়ে সন্দীপ ভোন্ডভের। তিনিই আমার ছোটবেলার কোচ। তাঁর অধীনেই ট্রেনিং শুরু হয়। পাঁচ বছর ধরে সমস্ত খরচ তিনিই বহন করেছেন। জিম থেকে শুরু করে ডায়েট, কোনও কিছুই বাদ যায়নি।" জানা যায়, লোহেগাঁওয়ের রায়বা তালমিটে ভাস্তাদ সোমনাথ মোজে এবং সদাশিব রাখপাসারের কাছেও ট্রেনিং নিয়েছে সানি।
সানি এখন দশম শ্রেণির ছাত্র। তার লক্ষ্য অলিম্পিক ম্যাটে পা রাখা। বিশ্বের বৃহত্তম মঞ্চে ভারতের পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে। তার ভাই সুরজের কথায়, "আমরা কুঁড়েঘরে থাকি। সেখানে কোনও দেওয়াল নেই। কিন্তু দাদার সাহস আমাদের শক্তি জোগায়। আশা করি সরকার আমাদের দিকে তাকাবে।" পরিবারের আশা, যেভাবে লড়াই করে বাহরিনের পোডিয়ামে তেরঙ্গা উড়িয়েছে, সেভাবেই 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে'ও একদিন বিচ্ছুরিত হবে সানির প্রতিভা।
