মৈনাক মণ্ডল: অনেকদিন ধরেই মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছিল পাক সেনা। অবশেষ সফল হল সেই অপচেষ্টা। সফলভাবে কাশ্মীরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাল পাকিস্তান। ২০১৬-র ১৮ সেপ্টেম্বর উরিতে চার জইশ জঙ্গির গুলি ও গ্রেনেড বৃষ্টিতে নিহত হয়েছিলেন ১৯ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান। সাত সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাঁদের। প্রতিরোধের সুযোগও পাননি। বেশ কিছুক্ষণ গুলিযুদ্ধের পর খতম করা হয়েছিল হামলাকারী পাক জঙ্গিদের। এর জবাব দিতে ওই বছরেরই ২৯ সেপ্টেম্বর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রাতের অন্ধকারে সফল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনার প্যারা কমান্ডোরা। মুখে চুনকালি মাখার পর দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন বদলা নেওয়ার কসম খেয়েছিলেন তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ। তাঁর সহকর্মীদের দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি অবসর নিলেও ‘বদলা’ নিতেই হবে। গত দু’ বছর ধরে কাশ্মীরে ও পাঞ্জাবে নানাভাবে পাল্টা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল পাক সেনা। কিন্তু সফল হচ্ছিল না। অবশেষে ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি নেতা মাসুদ আজহারকে সঙ্গে নিয়ে সফল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাল পাক সেনা। নেপথ্যে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।
[দুই জইশের পৃথক হানায় রক্তাক্ত ইরান-কাশ্মীর, দায় ছাড়ল পাকিস্তান ]
এতদিন বলা হত, ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ৪০ থেকে ৫০ জন জঙ্গিকে খতম করেছে। তার জবাব দিতে এদিন নিখুঁত পরিকল্পনামাফিক আইইডি বিস্ফোরক দিয়ে ৪২ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। পাক সেনার মদতে হামলার ছক এতটাই নিখুঁত ছিল যে, হতাহতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আফগানিস্তানে তালিবান, ইরাকে আল কায়দা এবং সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট যেভাবে মার্কিন ও রুশ সেনাদের নাস্তানাবুদ করে থাকে ঠিক সেভাবেই হামলা হয়েছে। মোডাস অপারেন্ডি বলছে, পাক সেনার প্রশিক্ষণ ও মদত ছাড়া এত সুচারুভাবে হামলা কার্যকর করা যেত না। হামলার আরেক মাস্টারমাইন্ড আদিলকে যতই কাশ্মীরের ভূমিপুত্র বা হোমগ্রোন টেররিস্ট বলা হোক না কেন এদিনের হামলার পিছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতাই যে মূল কারণ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনটাই মত প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়েচৗধুরিরও। কাশ্মীরের পুলিশ প্রশাসনে সর্ষের মধ্যে ভূত আছে। সরকারি কর্মীদের মধ্যে আজাদি ও জেহাদিদের সমর্থক অজস্র। না হলে এতবড় হামলার আঁচই বা কেন পেলেন না গোয়েন্দারা? যে শ্রীনগর-অনন্তনাগ হাইওয়েতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সর্বদা কড়া নিরাপত্তা থাকে সেখানে। এ দিন বিস্ফোরণের সময়ও রাস্তায় টহল দিচ্ছিল সিআরপিএফ, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং সেনার একটি বাহিনী। তাদের নজর এড়িয়ে কীভাবে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ল জঙ্গিরা? কাবুল, বাগদাদ, সিরিয়ার মতো কাটা, পোড়া লাশের পাহাড় এখন ভূস্বর্গে।
[বিপাকে মহাকাশে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, মঙ্গলে যাওয়ার টিকিট বেচেও দেউলিয়া]
গত সাত বছরের চেনা ছবি, পাক সেনা মাউন্টেন ডিভিশনের বর্ডার অ্যাকশন টিম (ব্যাট) চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে দু’-চারজন ভারতীয় জওয়ানকে কেটে কুপিয়ে হত্যা করত এবং তারপর মাথা কেটে নিয়ে পালাত। কাটা মাথা ফেরত দিত না। কিন্তু পাক সেনার পক্ষ থেকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার অপচেষ্টা চলছিলই। সীমান্তের এপারে নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতায় হয়তো ফাঁক ছিল। না হলে এরকম মর্মান্তিকভাবে এত জওয়ানকে শহিদ হতে হত না জওয়ানদের। উপযুক্ত জবাব দেওয়ার শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান। কিন্তু এবার খুব সতর্ক হয়ে গিয়েছে ধূর্ত পাক সেনা। আগের ভুল ওরা করবে না। তাই বিরাট ঝুঁকি হবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো। কারণ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভারতের। এদিকে, লোকসভা ভোটের আগে ফুলস্কেল ওয়ার (পুরো মেয়াদের যুদ্ধে) যাওয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাছাড়া স্বল্পমেয়াদের যুদ্ধ শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কোন পথে কীভাবে জবাব দিলে তা ‘সঠিক জবাব’ হবে তার উপায় খোঁজাটাই এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ। একটা ‘চরম শিক্ষা’ দিতেই হবে সন্ত্রাসের মদতদাতাদের। ভারতকে ‘হাজার ক্ষতে রক্তাক্ত করার’ যে কসম খেয়েছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক ও জুলফিকার আলি ভুট্টোরা তা ‘সুদে আসলে’ ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। আর্থিকভাবে দেউলিয়া একটি দেশের ‘বার বার পরাজিত’ ‘কাপুরুষ’ সেনাবাহিনীর ‘ছায়াযুদ্ধের’ শখ চিরকালের মতো ঘুচিয়ে দিক ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী’।