চারুবাক: টালিগঞ্জের পরিচিত মুখ ক্যামেরাম্যান থেকে পরিচালনায় স্নাতক হওয়া প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী ছবি করেন সাধারণ দর্শকের জন্য, যাঁরা টিকিট কেটে সিনেমা হলে ঢোকেন দু’ঘণ্টার মজা, আনন্দ পেতে, কোনও রাশভারি বক্তব্য শুনতে বা দেখতে নয়। তাঁর এমন স্পষ্ট স্বীকারোক্তি জানিয়ে দেয় ছবি হল আদি ও অনন্ত বিনোদনের মাধ্যম। সমাজ, সংস্কৃতি, ওসব পরের কথা, তাঁর চায়ের কাপ নয়। সুতরাং “পাকা দেখা” (Paka Dekha) দেখার জন্য হলে ঢোকার আগে বিশুদ্ধ মজা আর ফুর্তি পাওয়ার আশা নিয়ে যেতে হবে, কোনও লোকদেখানো সামাজিক দায়ভার দেখার জন্য নয়।
নায়ক সোহম (Soham Chakraborty) আর নায়িকা সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের (Sushmita Mukherjee) মাখোমাখো রসায়ন এবং জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Jeet Ganguly) সুরে “কাছে থাকবার মতো কি বন্ধু ডাকলেই পাওয়া যায়….” গানের সঙ্গে চা বাগানের লোকেশন দেখতে মন্দ লাগবে না। তবে চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত আস্তিনের তলায় আসল তীরটি লুকিয়ে রেখেছেন হাফ টাইম পর্যন্ত। নায়ক জয়(সোহম) এই জেট গতি যুগের তরুণ হয়েও দুর্দান্ত পাঞ্চুয়াল, অপূর্ব স্বাস্থ্য সচেতন। বিপরীতে তিয়াসা মানে সুস্মিতা ফাস্ট লাইফ লিড করতেই পছন্দ করে, যে জন্য বাবার(সন্তু) সঙ্গে তাঁর লাভ হেট সম্পর্ক। কিন্তু বিপরীতমুখী দুজনের মধ্যে “প্রেম” উদয় হলে প্রয়োজন হয় জয়ের পরিবারের সঙ্গে পাকা দেখা স্থির করার আগে একবার সাক্ষাৎ করে নেওয়া। সেখানেই পদ্মনাভ লুকিয়ে রাখেন আসল তাসটি!
[আরও পড়ুন: জমল না রহস্য, রিমেকের ‘কাঠপুতলি’ হয়েই রয়ে গেল অক্ষয়ের সিনেমা, পড়ুন রিভিউ]
বীরভূমের মল্লারপুর পৌঁছে দেখা যায় জয়ের বাবা-মা(খরাজ- লাবণী) এমনকী, ঠাকুরদা(দীপঙ্কর দে) পর্যন্তও মাতাল। তিয়াসার বাবা-মা( সন্তু – দোলন) তো এমন পরিস্থিতি দেখে হতবাক! কিন্তু পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার যে দর্শককে ফুলমস্তি উপহার দেবেন, সুতরাং কঠোর শৃঙ্খলা, সংযম, স্বাস্থ্য সচেতনতা চুলোয় দিয়ে সবাই বসে পড়েন ভদকা মেশানো ডাবের জল নিয়ে এক টেবিলে পাকা দেখা পাকা করতে।
সুতরাং লাবণী, খরাজ ও দীপঙ্করের মাতলামো নিয়ে যতই বাড়াবাড়ি হোক না কেন, ফুলটুস মস্তির জন্য দর্শককুল হয়তো সবটাই ক্ষমা ঘেন্না করে দেবেন। এটাই ছবির সাফল্যের একমাত্র ভরসা। তবে হ্যাঁ, পরিচালক প্রেমেন্দু নাটক ও মজা তৈরির কাজে কোনও খামতি রাখেননি। মাঝে মধ্যে বরং কিঞ্চিৎ সিনেম্যাটিক কেরামতিও দেখিয়েছেন। আর অভিনয়? সোহম ও সুস্মিতা দুজনেই জুটি হিসেবে সফল। ছবির দ্বিতীয়ার্ধ প্রায় ওদের কাছ থেকে নজর কেড়ে নিয়েছেন তিন প্রবীণ খরাজ, লাবণী, দীপঙ্কর। সন্তু এবং দোলনই বা পিছিয়ে কোথায়। সঠিক সংগত করেছেন। কমেডি ছবির ধর্ম মেনে সকলেই এক লয়ে পাকা নাটকীয় অভিনয়ে দর্শকদের বাস্তব অবাস্তবের ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে অনাবিল আনন্দের ফোয়ারায় ডুবে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।