অর্ণব আইচ: শুধু জামাত বা আনসারুল্লা নয়, বাংলায় সক্রিয় হচ্ছে পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবাও! ক্যানিং কাণ্ডে আরও স্পষ্ট হল সেই পাক যোগ। রবিবার ক্যানিং থেকে ধৃত জাভেদ আহমেদ মুন্সি আদপে পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেহাদি। যার সরাসরি যোগ রয়েছে লস্করের সঙ্গে। সেই জেহাদি সংগঠনের নির্দেশেই বাংলায় ঢুকেছিল জাভেদ। টার্গেট ছিল, সীমান্ত পেরিয়ে অশান্ত বাংলাদেশে ঢোকা।
পাকিস্তানের মাটিতে তৈরি হওয়া জাভেদ 'করিৎকর্মা' ছেলে! আইইডি বা বিস্ফোরক তৈরিতে হাত পাকিয়েছে সে। নিঁখুতভাবে যে কোনও বিস্ফোরক বানাতে ওস্তাদ। শুধু তাই নয়, নানান ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রও চালাতে জানে। সীমান্তের এক পার থেকে অন্য পারে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে সিদ্ধহস্ত। ভারতে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তেহরিক-উল-মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত জাভেদের এই 'গুণ'কে কাজে লাগাতে চেয়েছিল লস্করের মাথারা। আর তাই বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে তাকে সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল তারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, অশান্ত বাংলাদেশের আগুনে আরও ঘি ঢালতে মৌলবাদীদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ছক কষেছে পাক জঙ্গি সংগঠনগুলি। সেই 'ডিল' সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার স্বার্থে জাভেদকে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছিল তারা। কিন্তু তার আগেই ফাঁস হয়ে গেল ষড়যন্ত্র। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, জেরার মুখে ধৃত পাক জঙ্গি জানিয়েছে,জাল পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তানে যাতায়াত করেছে সে। আর তার এই রুটম্যাপই চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের।
বাংলাদেশের টালমাটার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে ক্রমেই বাড়ছে ভারত বিদ্বেষ। মনে করা হচ্ছে, ক্রমে বাড়তে থাকা ঘৃণার আগুনে ঘি ঢালছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং আইএস-আইএসকে-লস্কর-হিজবুলের মতো পাক জেহাদি সংগঠনগুলি। তারা ভারতের পড়শি দেশকে সন্ত্রাসের উর্বর ভূমি হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে থেকেই ভারতের অন্দরে অশান্তির বীজ বপন করতে চাইছে তারা। ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এদেশের বুকে নাশকতা চালানোর। আর এ জন্য চাই অস্ত্র। এদিকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক পাকিস্তানি জাহাজ নোঙর করছে। যার মাধ্যমে করাচি ঢাকায় পণ্য পাঠানো হচ্ছে বলা হলেও গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, জাহাজে বাংলাদেশে ঢুকছে পাক অস্ত্র। এদিকে আবার মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানের মাটি ছড়ে যাওয়ার সময় বহু অত্যাধুনিক অস্ত্র সেখানেই ফেলে গিয়েছেন। যা আপাতত তালিবান, আইএসের মতো একাধিক মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতে এসেছে। পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলি সেই অস্ত্র কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে চাইছে। কোথাও আবার এদেশের স্লিপারসেলগুলিকে সক্রিয় করতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়ার ছকও কষা হচ্ছে। যাতে সহজেই এ দেশে বসেই এদেশের বুকে ছুরিকাঘাত করা যায়। সেই অস্ত্র পাচারের রুট অ্যাক্টিভেট করতেই জাভেদের বাংলায় আগমন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তবে আজ থেকে নয়, গত এক দশক ধরে নাশকতামূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত জাভেদ। ২০১১ সালে সুন্নি সংগঠনের আল-ই-হাদিথের নেতা সওকত শাহের খুনে তার নাম জড়িয়েছিল। একাধিকবার জেল খেটেছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও রয়েছে জাভেদের বিরুদ্ধে। আপতত কাশ্মীর পুলিশের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে তাকে। কাশ্মীরি নিয়ে গিয়ে চলবে জিজ্ঞাসাবাদ।