সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৪ বছরের স্বপ্ন। তিল তিল করে নিজে হাতে 'হীরামাণ্ডি'কে গড়ে তুলেছেন। কোনওরকম কসরত বাকি রাখেননি পরিচালক-প্রযোজক সঞ্জয় লীলা বনশালি। কারণ, বনশালি মানেই 'লার্জার দ্যন লাইফ' সেট, সাজপোশাক। পয়লা মে মুক্তির পর থেকেই চর্চার শিরোনামে বনশালির ডেবিউ সিরিজ। সিনেসমালোকদের মার্কশিটে ঝকঝকে নম্বর পেলেও দর্শকদের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এবার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান 'হীরামাণ্ডি' দেখে বনশালির উপর বেজায় চটেছে।
পাক দর্শকদের একাংশের দাবি, এত কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু কোনও গবেষণা নেই লাহোরের 'হীরামাণ্ডি' নিয়ে। এই সিরিজ আসলে ১৯৪০ সালের লাহোরের বারবনিতাদের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি। কতটা দাপুটে ছিলেন সেখানকার গণিকারা? কিংবা ব্রিটিশদের সঙ্গে ওঠাবসা করা জাঁদরেল নবাবদেরকেই বা কীভাবে বশে রাখতেন সেই 'ডায়মন্ড বাজারের' নারীরা? সেইসমস্ত গল্পই 'হীরামাণ্ডি'তে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বনশালি। কিন্তু পাক দর্শকরা বলছেন, 'এই জাঁকজমকপূর্ণ সেটের সঙ্গে লাহোরের সেই জনপ্রিয় বারবনিতা গলির কোনও সাদৃশ্য নেই। পিরিয়ডিক একটা ড্রামায় ইতিহাসের এত গড়মিল!' এমনকী তৎকালীন সময়কেও ভুলভাবে তুলে ধরার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের দর্শকদের কথায়, 'সেইসময়ে হীরামণ্ডি বলে যে গণিকালয় পরিচিত ছিল, সেখানে এত বড় বড় দালান, কোঠা কোনও গণিকারই ছিল না। বহুতল বিল্ডিংয়ে মোটে ৫-১০ মহলা কোঠা ছিল শুধু। যেখানে গণিকাদের কাছে এত টাকাপয়সার প্রাচুর্য তো দূরঅস্ত! সেখানে ছিল শুধুই দারিদ্র, পেটের জ্বালা। অপরিষ্কার স্যাঁতস্যাঁতে একটা এলাকা লাহোরের হীরামণ্ডি।' পাক দর্শকদের প্রশ্ন, 'এই সেটটা আসলে কোথায় বানানো? লেক কোমো না আমলফি কোস্ট? হীরামণ্ডির ধ্বংসাবশেষ আজও লাহোরের ওই অঞ্চলের প্রতিটি বিল্ডিং থেকে দৃশ্যমান। সবচেয়ে স্পষ্ট ল্যান্ডমার্ক হল শাহী কিল্লা-গ্র্যান্ড মসজিদের চূড়া এবং গগনচুম্বী মিনার।' পরিচালক বনশালির উদ্দেশে তাঁদের একাংশের ক্ষোভ, 'আপনি বলছেন লাহোরের প্রেক্ষাপট, তাহলে সত্যিকারের লাহোর দেখান। যেটা ১৯৪০ সালে ছিল। তখন উর্দু ভাষার ততটা প্রচলন ছিল না এখানে। বরং সিংহভাগ মানুষ পাঞ্জাবী ভাষায় কথা বলতেন। সেখানে সিরিজে এত বেশি উর্দু ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।'
[আরও পড়ুন: বিয়ের ২ মাস পর হানিমুনে অনুপম-প্রশ্মিতা! ‘সোহাগে-আদরে’ তুরস্কে কেমন কাটছে মধুযাপন?]
'হীরামাণ্ডি' সিরিজে ব্যবহৃত গানেও আপত্তি তুলেছেন পাকিস্তানের সিনেদর্শকরা। তাঁদের কথায়, 'সুফি গান বলে যে গান ব্যবহার করা হয়েছে, তখন লাহোরে মোটেই সেই গান প্রচলিত ছিল না। শুধু কী তাই? 'সকল বান' গানটা তো লাহোরের গানই নয়, বরং 'চাইতি বাউড়ি ভে তাবিবা' গানটা প্রচলিত ছিল। ১৯৪০ সালে নূরজাহানের গাওয়া পাঞ্জাবী মাস্টারপিস, যা কিনা পরবর্তীতেও বহু ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এত জাঁকজমক পোশাক? হীরামাণ্ডির অলিগলি এত গ্ল্যামারাস ছিল না কোনওকালেই। যেখানে ছিল শুধুই দাসত্ব, গরিবী আর খিদে! এত গয়নাগাঁটি, গ্ল্যামারাস পোশাক কিছু ছিল না। শুধুমাত্র ফ্যান্সি পোশাক পরা হত মজলিশে।' তাঁদের দাবি, "বনশালি আদতে লাহোর বলে লখনউ, দিল্লির গণিকালয়ের ছবি তুলে ধরেছেন। একটু গুগল করে দেখে নিন আপনি।"