সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাজার হুমকি-হুঁশিয়ারির মুখেও ঘরবন্দি রইলেন না পাক তনয়ারা। হিজাব, বোরখার আড়াল ছেড়ে হাতে পোস্টার-ব্যানার নিয়ে, স্লোগান তুলে একেবারে রাজপথে নেমে এলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নিজেদের অধিকার প্রাপ্তির দাবি প্রতিধ্বনিত হল পাকিস্তানের বড় শহরগুলির পথে পথে। লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদ, মুলতান, কোয়েটায় শত-সহস্র নারীর সমাবেশ। পুলিশও বাধ্য হয়ে নারীদের মিছিলে নিরাপত্তা দিল। পাকিস্তানের মহিলা মহলের এই পদক্ষেপকে অনেকেই শিক্ষণীয় বলে মনে করছেন।
২০১৮, ২০১৯ সালেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এধরনের সভা, সমাবেশ আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছিল একটি নারীবাদী সংগঠন – হম অউরতে। কিন্তু লাগাতার মৌলবাদীদের হুমকির মুখে পড়েছিলেন পাকিস্তানের মূলত তরুণ প্রজন্মের মেয়েরা। ধর্ষণ, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মেয়েদের জায়গা অন্তঃপুরে, বোরখার আড়ালে। এর বাইরে তাদের কিছু করার নেই। তাই গত দু’বছর পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও নারী দিবসে প্রকাশ্যে কোনওরকম মিছিল বা সমাবেশ হতে পারেনি। তবে এবছর লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদের মেয়েরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, যে ভাবেই হোক, রাস্তায় নেমে নিজেদের সাহস ও শক্তি বোঝাতে হবে।
[আরও পড়ুন: চিনের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার ৭ দেহ, এখনও আটকে বহু]
সেই দৃঢ়তা থেকেই শেষমেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে ফেললেন তাঁরা। ইসলামাবাদ, করাচি ছাড়া পাকিস্তানের বাকি সবক’টি বড় শহরের প্রেস ক্লাবকে জমায়েত স্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১ টা। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন মহিলারা। শুরু হয় মিছিল। অংশগ্রহণকারী মেয়েদের হাতে প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা – নিজেদের অধিকারের কথা, অধিকার আদায়ের দাবি। সঙ্গে ড্রাম, ব্যান্ড, স্লোগান। ইসলামাবাদ, করাচির মিছিল শুরু হয় বিকেল ৩ টে নাগাদ। পাকিস্তানের মতো পর্দানশীন দেশের পথে পথে এমন দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হন অনেকেই। ইসলামাবাদে জামাতে-ইসলামির মহিলা সদস্যরা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে চায়না চক পর্যন্ত একটি মিছিল করেন। যা বিরল।
[আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে করোনার বলি আরও ২, ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে হাজির এক আক্রান্ত!]
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পাকিস্তানের মহিলাদের এই ভূমিকায় খুশি আন্তর্জাতিক মহল। অনেকেই টুইট করে তাঁদের সাহসের প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ সেখানকার প্রাক্তন দেশনায়ক জিন্নার নাম উল্লেখ করে লিখেছেন, জিন্না মনে করতেন নারীশক্তি কলম আর তলোয়ারের চেয়েও বেশি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। নারীদের সামাজিক সুরক্ষায় তাঁর সরকার যাবতীয় সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে পুরুষ মহলের সাহায্য যতই থাক, মেয়েরা নিজেরা যে সাহস করে অন্তঃপুর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে নিজেদের অধিকারের দাবি জানাতে পেরেছেন, তাকেই বড় সাফল্য বলে মনে করছে নারী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি একাংশ। তথাকথিত পুরুষতন্ত্র থেকে শুধু সামাজিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও নারীদের বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই সফল, সুন্দর হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আর সেই পথে পাকিস্তানের মহিলা মহল একধাপ এগোল বলে মনে করছেন তাঁরা।
The post অধিকারের দাবিতে রাস্তায় মহিলারা, নারী দিবসে পাকিস্তানের পথে বিশাল মিছিল appeared first on Sangbad Pratidin.