মণিশংকর চৌধুরী: পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election 2023) একেবারে শুরু থেকে নজর ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে ভোটের ফলপ্রকাশের দিন পর্যন্ত দফায় দফায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ব্লক। মনোনয়নে বাধা দেওয়া থেকে ভোটের দিন সন্ত্রাস, এই ভাঙড়ে হাজারও অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে শাসকদল। আবার পালটা হিংসার অভিযোগও এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্রেফ এই ব্লকেই ভোটের বলি হয়েছে তিন-তিনটে তরতাজা প্রাণ। প্রশ্ন হল, এ হেন ‘রক্তক্ষয়ী’ লড়াইয়ের ফল কী হল?
পাতি পরিসংখ্যান বলছে, ভাঙড়জুড়ে শাসকদলের ‘উন্নয়নের বন্যা’ বয়ে গিয়েছে। শুধু পোলেরহাট দুই নম্বর পঞ্চায়েত ছাড়া সবকটি পঞ্চায়েতই গিয়েছে শাসকের দখলে। ভাঙড় (Bhangar) এক নম্বর ব্লকের অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জিতেছিল তৃণমূল। ভাঙড় দুইয়েও ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৮টি আসনের মধ্যে ৮৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় শাসকদল। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০ আসনের মধ্যেও ১৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় শাসকদল। স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত বা সমিতির বোর্ড গঠনের থেকেও বেশি নজর ছিল যে আসনগুলিওতে ভোট হয়েছে, সেই আসনগুলির ফলাফলের দিকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যে আসনগুলিতে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পেরেছিল, সেই আসনগুলিতে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে। আর সেই লড়াইটাকেই আইএসএফ (ISF) তথা বিরোধী শিবির সাফল্য হিসাবে দেখছে।
[আরও পড়ুন: জোর করে মূত্রপান করানোর অভিযোগ তুলেছিলেন, তরুণকে নগ্ন করে পেটানোয় অভিযুক্ত তিনিই!]
ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বামনঘাটা পঞ্চায়েতে একচ্ছত্র জয় পেয়েছে তৃণমূল। বেওতা-ও তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। বেওতার এক নম্বর পঞ্চায়েতের সবকটি আসনও গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। বেওতার দুই নম্বর পঞ্চায়েতেও তৃণমূল জিতেছে অনায়াসেই। তবে এই পঞ্চায়েত বিরোধী শূন্য নয়। সেখানে ৩টি আসনে জয় পেয়েছে সিপিএম। ভগবানপুর পঞ্চায়েতের ২৮টি আসনের মধ্যে ১৪টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল। বাকি যে ১৪ আসনে নির্বাচন হয়, তার মধ্যে চার আসন জিতেছে আইএসএফ। ভোগালির দুটি পঞ্চায়েতে মোট আসন ৩৬। এর মধ্যে ২২টি আসনে কোনও প্রার্থী ছিল না বিরোধীদের। বাকি যে ১৪ আসনে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে ৭টি আসনে জিতেছে তৃণমূল (TMC), আর বিরোধীরা ৭টি আসনে জিতেছে। চালতাবেড়িয়ার ৩০ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২১টিতে। তার মধ্যে ১৩টি আসনে জিতেছে বিরোধীরা। আর তৃণমূল জিতেছে ৮ আসনে। যদিও ৯ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতায় বোর্ড গঠন করেছে শাসকদল। পোলেরহাট এবং শানপুকুর পঞ্চায়েতেও ছবিটা একইরকম। এই দুটি পঞ্চায়েতে ভোট হয়েছে ১০টি ও ১৬টি আসনে। এর মধ্যে পোলেরহাট এক নম্বর পঞ্চায়েতে ১০টির মধ্যে ৭টি জিতেছে আইএসএফ। তিনটি তৃণমূল। আবার শানপুকুরে ১২ আসনে আইএসএফে জিতেছে, তৃণমূল জিতেছে ৪ আসনে। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের দরুণ এই দুটি পঞ্চায়েতেই বোর্ড গঠন করবে শাসকদল। এই পঞ্চায়েতগুলিতে ভাল ফল করার পাশাপাশি পোলেরহাট দু’নম্বর পঞ্চায়েত দখলে গিয়েছে বিরোধীদের। সেখানে ২৪ আসনের মধ্যে ১৮টি গিয়েছে জমি রক্ষা কমিটি সমর্থিত নির্দলদের দখলে। আর পাঁচটি জিতেছে আইএসএফ। তৃণমূল জিতেছে মাত্র একটিতে।
এ তো গেল পঞ্চায়েত স্তরের কথা, পঞ্চায়েত সমিতিতেও ফলাফলের ট্রেন্ড একইরকম। ভাঙড় দুই ব্লকে ৩০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে ১৪টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় তৃণমূল। বাকি যে ১৬ আসনে ভোট হয়েছিল, সেগুলির ফল ৮-৮। আটটি আসন জিতেছে তৃণমূল। পাঁচটি আইএসএফ এবং ৩টি জমি কমিটি।
[আরও পড়ুন: বাংলার ভোট হিংসায় আক্রান্তদের অসমে ‘আশ্রয়’ দেওয়ার প্রস্তাব হিমন্ত বিশ্বশর্মার! কড়া জবাব তৃণমূলের]
সার্বিকভাবে দেখতে গেলে ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিই গিয়েছে শাসকদলের দখলে। কিন্তু শুধু যে আসনগুলিতে ভোট হয়েছে, সেই আসনগুলির বিচার যদি করা যায় তাহলে লড়াই তুল্যমূল্য হয়েছে। ভাঙড়ের আইএসএফ শিবির এখন আক্ষেপের সুরে বলছে, সন্ত্রাস পেরিয়ে যদি সব আসনে যদি দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো সার্বিক ফলাফল চমকে দেওয়ার মতো হত।