সুমিত বিশ্বাস ও সুনীপা চক্রবর্তী: রাজনৈতিক ময়দানে এই প্রথম উড়ল হলুদ আবির। এবং তা জঙ্গলমহলের মাটি থেকেই। লাল, সবুজ, গেরুয়া আবিরের সঙ্গে এবার দেখা গেল হলুদ আবিরও। ভরা বর্ষায় অকাল হোলিতে হলুদ রঙে রাঙল বনমহল।
জঙ্গলমহল পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে দু’টি করে মোট চারটি পঞ্চায়েত এককভাবে দখল করেন কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। পুরুলিয়ার ওই দু’টি পঞ্চায়েত হল পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের বেলমা ও আড়শার মানকিয়ারি। ঝাড়গ্রামে দুধকুন্ডি ও লোধাশুলি। তবে এই দুই জেলাতেই বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দক্ষিণ বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কুড়মিরা একটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও দখল করতে পারেনি। পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম ছাড়া ওই দুই জেলায় তারা যে দাগ কাটতে পারবেন না তা মনোনয়ন পর্বেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু পুরুলিয়ায় কুড়মিরা শাসক দলকে ভোট দিতে নিষেধ করার বার্তা দিয়ে তাঁদের প্রার্থীদেরকে জেতাতে যেভাবে প্রচারে ঝড় তুলেছিল। সেই সঙ্গে ধর্মকে হাতিয়ার করে অর্থাৎ তাদের দেবতা ‘জয় গরাম’ ধ্বনি দিয়ে ভোটে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এই জেলায় আশানুরূপ ফল হল না তাদের। সেভাবে ফল হয়নি বনমহল ঝাড়গ্রামেও।
[আরও পড়ুন: হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল কী? কী বলছে ব্যালট বাক্স?]
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুরুলিয়ায় যে ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল প্রকাশ হয়েছে তার মধ্যে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা ৬৫টির বেশি আসনে জয়লাভ করেছেন। ঝাড়গ্রামে তাঁরা জিতেছেন ৪০টির বেশি আসনে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৭টি, দক্ষিণ বাঁকুড়ায় ১০টি। পুরুলিয়ায় ১৭০টি ও ঝাড়গ্রামে ৭৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দুটি করে পঞ্চায়েত দখল করাকে বিশেষ আমল দিতে চাইছে না শাসক দল তৃণমূল। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “ধর্মকে ব্যবহার করে ভোট হয় না। উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট হয়। জঙ্গলমহলের মানুষজন তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন।” তবে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন,”আমরা এই জয়কে জঙ্গলমহলে ‘হলুদ ঝড়’ বলব। রাজনৈতিক ময়দানে হলুদ রঙও উড়িয়ে দিলাম। কুড়মি সমর্থিত নির্দল জয়ী প্রার্থীদের হলুদ অভিনন্দন।”
ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ায় কুড়মি ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ঝাড়গ্রামে পুরুলিয়ার চেয়ে অবশ্য একটু বেশি ৩৬ শতাংশ। কিন্তু তারপরেও তাদের ভোট নিজেদের জায়গায় এককাট্টা করতে পারেনি। কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের জেরে বিজেপির ভোটব্যাংকেই ধস নেমেছে। কারণ গত পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা হয়ে বিধানসভা পর্যন্ত জঙ্গলমহলের অধিকাংশ কুড়মি ভোট গেরুয়া শিবিরেই পড়ে। এবার কুড়মি জোট বাঁধার স্লোগান ছিল তাদের। গ্রাম পঞ্চায়েতে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা কিছু আসনে জয় পেলেও পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের জঙ্গলমহলের চার জেলায় তাদের ফল একেবারেই ভাল হল না। পুরুলিয়ায় শাসক দলকে ভোট না দেওয়ার জন্য প্রচার করাটা অনেকাংশেই বুমেরাং হয়েছে। এই জেলার বহু কুড়মি ভোটার শাসকদলে ভোট দিয়েছেন। একই ছবি ধরা পড়েছে ঝাড়গ্রামেও।
[আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় তৃণমূলের, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাঙড় বিরোধীদের!]
পুরুলিয়ার আড়শা ব্লকের যে মানকিয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েত কুড়মিরা দখল করেছেন। সেখানে ১৪টি আসনের মধ্যে তারা ন’টি আসন পেয়েছেন। একইভাবে পুরুলিয়া দুনম্বর ব্লকের বেলমা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের মধ্যে তারা জয় পেয়েছেন দশটি আসনে। নিজেদের গড় বান্দোয়ানের পঞ্চায়েত সমিতিতে ২টি আসন দখল করেছেন কুড়মিরা। ঝাড়গ্রামের যে দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত তারা দখল করেছেন সেই দুধকুন্ডি গ্রামপঞ্চায়েতের ৮টি আসনের মধ্যে ৬টি কুড়মিদের। লোধাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১ আসনের মধ্যে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন ৬টি আসনে। শালবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমলাচটি বুথটি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি চুড়ামনি মাহাতোর বুথ। এখানে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করায় জল্পনা বেড়েছে।