সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের পঞ্চায়েত (Panchayat Election 2023) হিংসার বলি ৩৫ পেরিয়েছে। অর্থাৎ স্রেফ গণতন্ত্রের উৎসবের নামে হিংসা-হানাহানিতে ৩৫ জনের বেশি সহনাগরিকের প্রাণ গেল। পরিজনহারা হল এতগুলি পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই শাসকদলের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে। যদিও শাসকদল পালটা নিশানা করছে বিরোধীদেরই। তাঁদের বক্তব্য, দিকে দিকে আক্রান্ত হচ্ছে তৃণমূলই। আক্রান্ত যেই হোক, হিংসা হয়েছে। আর এই হিংসা একেবারেই নতুন নয়। বছরের পর বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে চলে আসছে এই হিংসা।
রাজ্যের পঞ্চায়েত হিংসার এই ধারা শুরু হয়েছিল বাম আমলেই (Left Regime)। যারা বাম আমলের স্বর্ণযুগ প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁরা হয়তো আজকের ভোটের চিত্র দেখে তেমন বিস্মিত হন না। শুধু এই শতকের হিসাবও যদি দেখা যায়, তাহলেও বোঝা যাবে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসা একেবারেই বাম আমলকে ছাপিয়ে যায়নি। বরং আগের তুলনায় অনেক জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ক্ষোভকে লোকসভায় কাজে লাগান! বঙ্গ বিজেপিকে নির্দেশ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর]
বাম আমলের সবচেয়ে রক্তাক্ত ভোট হয়েছিল ২০০৩ সালে। সেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে অনেকাংশে বিরোধীরা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত বেঘোরে শাসকের রোষে পড়তে হয়েছে নিচুতলার বিরোধী কর্মীদের। সেবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল! ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাংলায় রীতিমতো পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। বলা ভাল বাম সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। বিরোধীদের প্রতিরোধ বেড়েছিল। সেবারেও মৃত্যু হয়েছিল ৩৬ জনের।
[আরও পড়ুন: ‘এমনটা ভাবাও ভুল’, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আপত্তি মোদির ‘বন্ধু’ আজাদের]
এ তো গেল বাম আমলের শেষ দুই নির্বাচন। তৃণমূল আমলেও ছবিটা বদলায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ‘বদলা নয় বদলে’র কথা বলুন ভোট সংস্কৃতি রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। ২০১৩ সালে মীরা পাণ্ডের নেতৃত্বে পুরোপুরি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছিল। সেবারেও মৃত্যু হয় সব মিলিয়ে ৩৯ জনের। এর মধ্যে ভোটের দিনই প্রাণ যায় ১৯ জনের। ২০১৮ সালে রাজ্যের ৩৩ শতাংশ আসনে ভোটই হয়নি। তাতেও হিংসা রোখা যায়নি। সেবারও ভোটের বলি হন ২৯ জন। নির্বাচনের দিনই প্রাণ যায় ১৮ জনের। আসলে বাংলায় ক্ষমতা দখলের রাস্তাটা আসে গ্রাম হয়েই। তাই কোনও দলই গ্রামের রাশ তাঁরা হাতছাড়া করতে চান না। যার ফলশ্রুতি এই ভোট হিংসা।