দেবব্রত দাস, খাতড়া: একই ছাদের তলায় থাকেন। একই রান্না ঘরে একজন সবজি কেটে দেন, অন্যজন রান্না চাপান। সম্পর্কে দুই জা। জায়ে জায়ে ভাব একেবারে গলায় গলায়। তবে সেটা বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে। ‘মধুর সম্পর্কের’সেই বেড়াজাল ভেঙে এবার একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্ডা পরিবারের দুই বধূ। একজন তৃণমূল (TMC) কংগ্রেসের প্রার্থী। অন্যজন বিজেপি (BJP) প্রার্থী। সৌজন্যে ভোট রাজনীতি।
বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের হাড়মাসড়া পঞ্চায়েতের কদমা গ্রামের পণ্ডা পরিবারের দুই গৃহবধূ পদ্মাবতী পণ্ডা ও সুপ্রিয়া পণ্ডা। এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁরা। হাড়মাসড়া পঞ্চায়েতের ৬৬ নম্বর কদমা বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন পদ্মাবতীদেবী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছোট জা সুপ্রিয়া বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। পেশায় আশাকর্মী পদ্মাবতী। সুপ্রিয়া অবশ্য বাড়ির কাজ সামলে টিউশন পড়ান। পেশা ভিন্ন হলেও এবারই প্রথম রাজনীতির ময়দানে এই দুই জা। তাও আবার পরস্পরের বিরুদ্ধে সমুখ সমরে। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরেনি বলে দুই জায়ের দাবি।
[আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023: তিনি কি পদত্যাগ করতে পারেন? জল্পনার মধ্যেই মুখ খুললেন রাজীব সিনহা]
হঠাত কীভাবে রাজনীতির ময়দানে?
তৃণমূল প্রার্থী পদ্মাবতীর দাবি, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করি। আমার নেত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে ভালবাসি। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাই আমি এবার পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছি। বাড়ির কাজ সামলে প্রচারেও বের হচ্ছি।” সুপ্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলছেন, “ছোট জা আমার বোনের মত। আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হলেও আমাদের সম্পর্ক বেশ মধুর আছে।” অন্যদিকে, পদ্মাবতীর প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরই ছোট জা সুপ্রিয়া পণ্ডা বলেন, “আমি বিজেপির সমর্থক। তাই বিজেপি নেতৃত্ব আমাকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী ঠিক করায় আমি আর অমত হইনি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন বড় জা। রাজনীতিতে ভিন্ন মেরুর হলেও আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলেনি। আমরা এখনও একসঙ্গে রান্না করি, পাশে বসে খাওয়া-দাওয়া করি।”
পদ্মাবতীর স্বামী দীপককুমার বলেন, “তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের নেতারাই আমাদের বাড়িতে এসে ওদের দুজনকে প্রার্থী করেছে। আমরা অমত করিনি। তাই পদ্মাবতী তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছে। আর সুপ্রিয়া বিজেপির প্রার্থী হয়েছে।” সুপ্রিয়ার স্বামী মৃনাল পণ্ডা বলেন, “আমার স্ত্রী ও বউদি একই বুথে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছে বলে পরিবারে কোনও সমস্যা হয়নি। ভোটের রেজাল্ট যাই হোক। কোনও সমস্যা হবে না।”
[আরও পড়ুন: ‘পঞ্চায়েত ভোট কি হচ্ছে?’, ৮১ ISF প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল মামলায় প্রশ্ন হাই কোর্টের]
কদমা বুথে পঞ্চায়েতে দুই জা এর পাশাপাশি আরও একজন প্রার্থী রয়েছেন সিপিএমের মঙ্গলা লোহার। তালডাংরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি তারাশঙ্কর রায় বলেন, “আমাদের দলের প্রার্থী পদ্মাবতী জিতবেন।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “এলাকার মানুষ আমাদের দলের প্রার্থীকেই বিপুল ভোটে জেতাবেন।” সিপিএমের তালডাংরা এরিয়া কমিটির সম্পাদক হারাধন ঘোষ বলেন, “এলাকার মানুষ এখন তৃণমূল বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন। ভোটারদের সমর্থন আমাদের দলের প্রার্থী পাবেন।”
হেঁশেলে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা দুই জা পদ্মাবতী ও সুপ্রিয়া রাজনীতির ময়দানে যুযুধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আর দুই জায়ের এই লড়াই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন কদমা গ্রামের বাসিন্দারা। ভোটের লড়াইয়ে কার কপালে বিজয় তিলক পড়বে সেটাই এখন দেখার।