সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: দাম চড়তে শুরু করেছিল ভোটের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে। ভোট (Panchayat Poll) শেষে ফল ঘোষণার আগে মুরগির দাম আরও বাড়ল। সোমবার বিকালে পুরুলিয়ার গ্রামীণ এলাকায় পোল্ট্রি মুরগির কাটা মাংস কেজি প্রতি ২৩০ টাকা। যা ভোটের আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। কিন্তু এমন দাম বাড়ার কারণ কী?
ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা এই জেলায় ভোট এলেই মুরগির দাম চড়া হয়। যতই কমিশনের বিধি নিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা থাকুক না কেন। সেই বিধি নিষেধ উড়িয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি মাংস দিয়েই চলে তাদের প্রভাবিত করা বলে অভিযোগ। আর যখন পঞ্চায়েত নির্বাচন আসে তখন তো মুরগির চাহিদা রাজনৈতিক দলগুলির এতটাই থাকে যে সাধারণ মানুষ ওই চড়া দাম দিয়েও হাতে পান না। কিন্তু ভোট শেষে ফলের আগে এত দাম চড়ল কেন? এইসব নিয়ে পুরুলিয়ার গ্রামে-গঞ্জে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে কোনও রা নেই। দাম বাড়ার কারণ সামনে আনছেন মাংস বিক্রেতারাই। তাঁদের কথায়, যেমন-যেমন গণনা চলবে। ফল যেমন বার হবে মাংস রান্না করে চলবে খাওয়া-দাওয়া। একেবারে ভূরিভোজ। আর এই ভূরিভোজে গাঁ-গঞ্জে ভোটারদেরকেও খাওয়ানো হবে। পুরুলিয়ার গ্রামীণ এলাকায় এ যে ভোট উৎসব। যা আসে পাঁচ বছর পর পর।
[আরও পড়ুন: ‘পরিবর্তন’ মিছিল চান ভোট হিংসায় ‘লজ্জিত’ শুভাপ্রসন্ন, ‘ইচ গার্ড লাগান’ কটাক্ষ কুণালের]
ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের বেগুনকোদরে একটি মাংসের বাজার রয়েছে। এখানে যে শুধু হরেক রকম কাটা মাংস পাওয়া যায় তা নয়। সেই কাটা মাংস একেবারে কাঁচা মশলা দিয়ে কষিয়ে পর্যন্ত বিক্রি হয়। ফলে এই ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাংস কিনে তা কষিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী, লাগোয়া ব্লক ঝালদা ১ নম্বর থেকেও মানুষজন এই বাজারে আসেন। ভোট শেষে ফল ঘোষণার আগের দিন এই মাংস বাজার যেন একেবারে থিকথিকে ভিড়। এই মাংস বাজারে মুরগির কাটা মাংস বিক্রেতা কেশব রজক বলেন, “ভোটের আগে কেজি প্রতি এই মাংসর দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এদিন সন্ধ্যায় বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৩০ টাকা। মঙ্গলবার ফলাফলের দিন আরও বাড়বে। আর সেই দাম বৃদ্ধির জন্য এরপর মাংস মিলবে কিনা তাও জানি না।” এই কাটা মাংস কাঁচা মশলা দিয়ে কষিয়ে যারা বাজারে বিক্রি করেন তাদের মধ্যে বিবেক রজক বলেন, “আমরা ঠেলাগাড়িতে এই কাজ করি। আমরা বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঠেলাগাড়ি বাজারে নিয়ে আসি। ভোটের সময় থেকে মাংসের যা চাহিদা তাতে সাড়ে তিনটের সময় আমরা চলে আসছি। বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাচ্ছে। মশলা দিয়ে মাংস কষিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কেজি প্রতি ১০০ টাকা নিয়ে থাকি।”
বাঘমুন্ডি বিধানসভার ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের পোলট্রি মুরগির কাটা মাংস যায় ঝালদা শহর থেকেও। ওই শহরের মাংস বিক্রেতা লখিচরণ কান্দু বলেন, “বিকালের পর বহু খদ্দেরকে ঘোরাতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা এতটাই থাকে। যে বাকি খদ্দেরদের দেওয়াই যায় না। ” তুলিন হাটবাগানের মাংস বিক্রেতা শ্রীমন্ত রজক বলেন, “ভোটের ফলাফলের সন্ধে পর্যন্ত কাটা পোলট্রি মুরগির মাংসের দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা পার হয়ে গেলেও অবাক হবো না। চাহিদা এমন জায়গায় পৌঁছেছে।”