পাপিয়া চৌধুরী: উস্তাদ রাশিদ খান (Ustad Rashid Khan)। এমন এক নাম যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে। চিরকালীন, অবিনশ্বর। পণ্ডিত ভীমসেন যোশী বলতেন, হিন্দুস্তানি সঙ্গীতে রাশিদ খান এক আস্থাভাজন নাম। তিনিই ভবিষ্যৎ। হ্যাঁ, এই নামেই যে কত গান, কত সুর মনে পড়ে যায়। এই গান, এই কন্ঠই তো আমাদের সম্পদ হয়ে থেকে যাবে।
উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে জন্ম হলেও ছোটবেলাতেই কলকাতায় চলে আসেন রাশিদ।কলকাতাকে নিজের কর্মভূমি বলতেন। রামপুর-সহসওয়ান গায়কিতে মুনশিয়ানা ছিল তাঁর। অপূর্ব মার্জিত সুরে যেন মেলবন্ধন ঘটত গোয়ালিয়র ঘরানার সঙ্গে। কিন্তু রাশিদের পরিবেশনার মুনশিয়ানায় তা কখনও প্রকট হয়ে ওঠেনি। তাঁর গায়কির মাদকতায় মন বিভোর হয়ে যায়। তাতে উস্তাদ আমির খান, ভীমসেন যোশীর প্রভাবও অস্বীকার করার নয়।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত উস্তাদ রাশিদ খান, সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রপতন]
কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও রাশিদ খান নিজস্বতা বজায় রেখেছিলেন। আর এটাই তাঁর সিগনেচার। যেকোনও তান, বন্দিশ, তরানায় রাশিদের উপলব্ধি ও মন্থন সুরের এক অদ্ভূত মায়াজাল তৈরি করত। সেই আবেশ যেন এখন কানে রয়ে গিয়েছে। বাংলা কিংবা হিন্দি সিনেমায় যখনই গেয়েছেন, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে হয়েছে।
সুর নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন রাশিদ খান। পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তাঁর আগ্রহ কম ছিল না। ফিউশনেও আপত্তি ছিল না, যদি তা শ্রুতিমধুর হয়। কখনও পাশ্চাত্যের যন্ত্রশিল্পী লুইস ব্যাঙ্কসের সঙ্গে, কখনও আবার সেতারশিল্পী উস্তাদ শাহিদ পারভেজের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। সে যুগলবন্দি যিনি শুনেছেন, একবাক্যে স্বীকার করবেন। আহা, এই তো সুরের গাঁটছড়া। ২০২২ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মান পেয়েছেন রাশিদ খান। পেয়েছেন সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার। এমন সুখস্মৃতি সঙ্গে নিয়েই বিদায় জানাই সুরের আকাশের এই শুকতারাকে।