সন্দীপ্তা ভঞ্জ: তন্ত্রের জোরে কেউ একজন জাগিয়ে তুলেছে অশরীরীদের। আর সেই অলৌকিক অপশক্তির উৎপাতে ওষ্ঠাগত শহুরে প্রাণ। সেই রহস্যভেদ করতেই ভাদুড়ি মশাইকে আবারও ফেরালেন পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। শহরের বুকে মানুষের ভিড়ে 'তেনাদের' অস্তিত্ব কি সম্ভব? তন্ত্রসাধনার জোরই বা কতটা? এই প্রশ্ন বরাবরের। আর ভূত চতুর্দশী, দীপাবলি 'তেনাদের' গল্প বলার মোক্ষম সময়। ঠিক এইসময়ে 'নিকষ ছায়া' সিরিজে (Nikosh Chhaya Review) সেরকমই এক গা ছমছমে ভুতুড়ে গল্প দেখালেন পরমব্রত।
'পর্ণশবরীর শাপ' সিরিজে পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে ভৌতিক গল্প বলে গায়ে কাঁটা ধরিয়েছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তবে এবারের প্রেক্ষাপট শহর। সেখানকার সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে আচমকাই উধাও একের পর এক মৃতদেহ। নেপথ্যে কে বা কারা? রহস্যভেদ করতে মাঠে নামে পুলিশ অফিসার অমিয় (গৌরব চক্রবর্তী)। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই বুঝতে পারে যে, এই কেস তার নয়। এর জন্যে প্রয়োজন নীরেন ভাদুড়িকে। তন্ত্রসাধক ভাদুড়ি মশাই অভিযানে নেমেই আবিষ্কার করেন এ কর্মকাণ্ড কোনও সাধারণ তান্ত্রিকের নয়। উধাও হয়ে যাওয়া সব মৃতদেহ শবসাধনায় কাজে লাগিয়েছে কোনও এক কাপালিক। আর সেই শক্তিশালী অঘোরীর মদতের জন্যই শহরে এক পৈশাচিক উৎপাত শুরু হয়েছে। গল্পের মোড় ঘোরে, যখন অমিয় টিমেরই এক পুলিশের মেয়ে বন্যা অপহৃত হয়ে যায়। সেই সূত্র ধরেই তান্ত্রিক ভানুর হদিশ পান নীরেন ভাদুড়ি। রক্তিম চন্দ্রগ্রহণের দিন অমর হওয়ার আশায় একের পর এক পৈশাচিক সব কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে সে। তার পর? গা ছমছমে ভৌতিক গল্প দেখতে হলে অবশ্যই চোখ রাখতে হবে হইচই-এর পর্দায়।
এবার আসা যাক, অভিনয়ের কথায়। পরমব্রতর ফ্রেমে সিরিজের প্রতিটা চরিত্রের অভিনয়ই এককথায় অনবদ্য। ভাদুড়ি মশাইয়ের ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী আগের সিরিজেই নিজের ঝাঁজ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এবার 'নিকষ ছায়া' সিরিজেও তার অন্যথা হল না। রক্তবর্ণ পোশাক, কপালে তিলক, তেমনই বলিষ্ঠ তান্ত্রিকের ভূমিকায় বাজিমাত করেছেন। তবে এই সিরিজে নীরেন ভাদুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। কৌতূক অভিনেতা হিসেবেই দর্শক সাধারণত তাঁকে দেখেছেন, তবে পরমব্রতর সিরিজে অঘোরী তান্ত্রিকের ভূমিকায় চোখ দিয়েই অভিনয়ের ব্যাকরণ শেখালেন কাঞ্চন মল্লিক। নীরেন ভাদুড়ির অ্যাসিস্ট্যান্ট মিতুলের চরিত্রে যেমন সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় অনবদ্য, তেমনই পুলিশ অফিসারের চরিত্রে তুখড় গৌরব চক্রবর্তী। তবে বিশেষ করে নজর কেড়েছেন অনুজয় চট্টোপাধ্যায়। শৈশবের ট্রমা কীভাবে সারাজীবন একটা মানুষকে তাড়া করে বেরায়? সাবলীল অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন অনুজয়। অনিন্দিতা বোসও যথাযথ। ৬ পর্বের সিরিজ। মেদহীন টানটান চিত্রনাট্য। কোথাও এতটুকু একঘেয়ে লাগে না দেখতে বসে। বেশ কিছু আলো-আধারি দৃশ্যের সিনেম্যাটোগ্রাফিও প্রশংসার দাবিদার। শেষপাতে, সিক্যুয়েল আসার ইঙ্গিত দিয়ে কৌতূহলটা আরও বাড়িয়ে দিলেন পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।