বিপ্লব দত্ত ও দীপঙ্কর মণ্ডল: প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা গরমে ফ্যানের হাওয়া পেলেও একই স্কুলে বঞ্চিত অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়ারা। প্রচণ্ড গরমে মাঝেমধ্যেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একই স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য দ্বৈত আচরণের কারণে শেষপর্যন্ত বিক্ষোভে নামলেন ওই স্কুলের অঙ্গনওয়াড়ি পড়ুয়াদের অভিভাবকরা।
সোমবার নদিয়ার শান্তিপুরের বাইগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ চলে। স্কুলে দেরিতে আসার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে দেখানো হয় বিক্ষোভ। অবশেষে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়াদেরও প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে ফ্যানের হাওয়া পাওয়ার আশ্বাস পেলে শান্ত হন বিক্ষোভকারীরা। ওই স্কুলে চলে ২০২ এবং ৪৩২ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার। ওই স্কুলের ক্লাসরুমে সকালে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস হয়। এরপর বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস।
[আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে অবশেষে রাজি অনুব্রত মণ্ডল, দিলেন শর্ত]
অভিভাবকদের অভিযোগ, “প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য লাইট ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও তার থেকে বঞ্চিত অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়ারা। প্রাথমিক বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিদ্যুতের লাইন অফিস ঘর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পরদিন সকালে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়ারা তীব্র গরমের মধ্যে ফ্যানের হাওয়া ছাড়াই ক্লাস করে। তার ফলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিষয়টি বারবার অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জানানো হয়েছে। তাঁরা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েওছেন। অথচ কোনও সুরাহা হচ্ছে না। সকালের দিকে মাত্র তিন ঘণ্টার ক্লাসে শিশুদের জন্য ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলে তারা সুস্থভাবে পড়াশোনা করতে পারে। অথচ সেদিকে কারও কোনও হেলদোল নেই। তার জন্য ইলেকট্রিক বিল কতই বা হতে পারে? কে মেটাবে সেই বিল, তা আমরা দেখতে চাই না। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের পড়ুয়াদের জন্য ফ্যান চালানোর ব্যবস্থা করতেই হবে।”
এই বিষয়ে দুটি সেন্টারের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা সীমা সাহা অধিকারী এবং শম্পা মাহাতো জানিয়েছেন, বিষয়টি লিখিতভাবে এর আগে জানানো না হলেও মৌখিকভাবে স্থানীয় কাউন্সিলর, আইসিডিএস অফিসের গোচরে আনা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনও গুরুত্ব দেননি। অথচ অভিভাবকদের জবাবদিহির মুখে পড়তে হয় তাঁদেরই। অথচ প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক শিক্ষিকারা সহযোগিতার হাত বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা আলপনা বিশ্বাস বলেন, “আমাদের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কিছু টাকা দিতে রাজি হলেও অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষিকারা রাজি হচ্ছেন না।” অথচ সামান্য বিদ্যুৎ বিলের কারণে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের শিশুরা গরমে কষ্ট পাচ্ছে, তা তিনি স্বীকার করে নেন। এদিন স্কুলের গেটের সামনে বিক্ষোভরত অভিভাবকরা প্রাথমিক বিভাগের শিশুদের স্কুলে ঢুকতে দিলেও স্কুলের গেটে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে দেন। খবর পেয়ে ছুটে আসে শান্তিপুর থানার পুলিশ। অবশেষে মঙ্গলবার থেকে অঙ্গনওয়াড়ির দুটি সেন্টারের পড়ুয়াদের জন্যও ফ্যান চালাতে দেওয়া হবে বলে প্রধান শিক্ষিকা আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে।
[আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তিদের নামে সরকারি প্রকল্পের ঘর! ভূতুড়ে কাণ্ডে চাঞ্চল্য কালনায়]
এদিকে, তীব্র গরমে স্কুল পড়ুয়া ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিল রাজ্য সরকার। সোমবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জেলাশাসকের একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ হবে বুধবার। একই সঙ্গে শেষ হবে একাদশের বার্ষিক পরীক্ষা। সংসদ প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পানীয় জল যাতে থাকে তা খেয়াল রাখতে বলেছে। একইসঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে সংসদ। পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ গরমের কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যাতে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে বলেছে সংসদ।