সুমন করাতি, হুগলি: আট দিন ধরে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখলেন বাবা-মা। কারণও আজব। তাকে ভূতে ধরেছে বলে মনে করে বেঁধে রাখলেন বাড়ির লোক। খবর পেয়ে বাড়িতে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। যায় পুলিশও। পরিবারের দাবি, ছেলে হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। ডাক্তার দেখিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। তাই এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়। ঘটনাটি হুগলির (Hooghly) কেওটার হেমন্ত বসু কলোনি এলাকার। অসুস্থ কিশোরের নাম আকাশ মালাকার। সে স্থানীয় শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। পরিবারে দাবি, দিন আটেক আগে টিউশন থেকে ফেরার পর থেকেই অদ্ভুত আচরণ শুরু আকাশ। সেই আচরণ বাড়তে থাকে। পরিবার জানিয়েছে, স্থানীয় হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসা করায়। তবে বিশেষ লাভ হয়নি। এদিকে ছেলে যাকে তাকে মারতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। আকাশকে ভূতে ধরেছে মনে করে পাড়ার লোকের পরামর্শ মেনে ওঝার কাছে নিয়ে যান। তার পর থেকেই সে শিকলে বাঁধা।
[আরও পড়ুন: মায়ের গয়না ‘লুঠ করে’ নতুন বাইক! বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু যুবকের]
খবর পেয়ে আকাশের বাড়ি যান বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে কিশোরকে চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। কিশোরের বাবা-মা জানিয়েছেন তাঁরা আকাশের চিকিৎসা করাবেন। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য দিবজ্যোতি দাস বলেন, "আমরা খবর পেয়ে এখানে এসে দেখি ছেলেটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পরিবারে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যার ফলে ওঝা, তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিলেন। আমরা চিকিৎসা করানোর কথা বলেছি। আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে সেখানে ডাক্তার না দেখিয়ে ওঝার কাছে যাওয়ার ফলে আক্রান্তকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। পরিবারকে চিকিৎসকদের উপরে ভরসা রাখতে বলেছি।"
আকাশের দিদি বলেন, "ভাইকে প্রায় আটদিন ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে। ও খাওয়া-দাওয়া কিছু করছে না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর একটু ঠিক থাকার পর আবার একই অবস্থা। আমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু ও কারোর কথা শুনছে না। সবাইকে মারতে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বেঁধে রেখেছি। কী হয়েছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।" কিশোর বাবা কার্ত্তিক মালাকার বলেন, "দিন আটেক আগে ছেলেকে টিউশন থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে দেখি। সব ঠিক ছিল। আমি বাড়িতে যেতে বলে, কাজে যাই। ফিরে এসে দেখি ও অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ডাক্তার দেখিয়ে কিছুটা ঠিক হলেও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে বেঁধে রেখেছি। আগামী ডাক্তার দেখাব।"