স্টাফ রিপোর্টার : ড্যানিয়েল বেথেলের শটটা দাগের বাইরে যেতেই যেন পাহাড়প্রমাণ চাপ সরে গেল নীতেশ কুমারের উপর থেকে। ভারতীয় প্যারা শাটলারের মুখে সেই স্বস্তি স্পষ্টই ফুটে উঠেছিল। আসলে দ্বিতীয় গেমে এগিয়ে গিয়েও হারতে হয়েছিল। তৃতীয় গেমও যেন একটু একটু করে সেপথেই এগিয়ে চলেছিল। অবশেষে সোমবার সেই ফলের পুনরাবৃত্তি ঠেকিয়ে প্যারা অলিম্পিকে সোনা জয়ের স্বস্তি তাই একটু বেশিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল নীতেশের মুখে।
আসলে প্যারা ব্যাডমিন্টনের এসএল৩ ক্যাটাগরির সিঙ্গলস বিভাগে সোনালি পদকটা যেন কিছুতেই ধরা দিচ্ছিল না নীতেশের মুঠোয়। ২০২২ টোকিও বিশ্ব প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে প্রমোদ ভগতের কাছে হেরে রানার্স। পরের বছর প্যারা এশিয়ান গেমসেও তারই পুনরাবৃত্তি হয়। আর এ বছর পাটায়া বিশ্ব প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপে তো ফাইনালেই উঠতে পারেননি। শেষ চারে হেরে ব্রোঞ্জেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় নীতেশকে। আর এদিন প্যারিসের ফাইনালে যেন সেই সেমিফাইনালের ‘রি-ম্যাচ’ হল। কারণ সেদিন প্রতিপক্ষ ছিলেন ব্রিটিশ প্যারা শাটলার ড্যানিয়েলই, যাঁর বিরুদ্ধে এদিনের আগে সব ম্যাচই হেরেছেন নীতেশ। তবে ফাইনালের প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিশেষ ভাবনা ছিল না তাঁর। প্যারিসে ভারতের দ্বিতীয় সোনা জয়ী এই তারকা বলছিলেন, “ড্যানিয়েলের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে আমার তেমন কোনও বাড়তি ভাবনা ছিল না। বরং ম্যাচের আগে পুরো সময়টাই নিজে কীভাবে খেলব, সেটা নিয়েই ভেবেছি। ড্যানিয়েলকে হারানোর ভাবনা মনে আসলেও তাকে গুরুত্ব দিইনি। শুধু ম্যাচে ফোকাস করেছি। প্রথম গেমের পরও জয়ের পর কী করব, সেসব চিন্তা করিনি। বরং ম্যাচটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথাই ভেবেছি।”
[আরও পড়ুন: রোহিত কি ধোনি-কোহলির থেকে ভালো অধিনায়ক? ভারতের তারকা স্পিনার বললেন…]
এদিন প্রথম গেমটায় বেশ দাপট নিয়েই ২১-১৪ ব্যবধানে জেতেন নীতেশ। তবে দ্বিতীয় গেম এগিয়ে থেকেও হারেন ১৮-২১ ব্যবধানে। ফলে একই ধারা অনুসরণ করে তৃতীয় গেমে নীতেশ ১৯-২০ ব্যবধানে পিছিয়ে যেতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল ভারতীয় শিবিরে। তবে শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে গেম আর ম্যাচ জেতেন তিনিই। যে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে নীতেশ বলছিলেন, “আমি অতীতেও এই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ হেরেছি। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি এখানে করতে চাইনি। জানতাম এবার অধৈর্য হওয়া যাবে না। তৃতীয় সেটে ১৯-২০ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলাম। তখন শুধু একটা কথাই নিজেকে বারবার বলেছি, এখনও ম্যাচ শেষ হয়নি। একটা পয়েন্টের খেলা বাকি আছে। সেটার জন্যই লড়তে হবে। কারণ এতদূর আসার পর একটা পয়েন্টের জন্য সোনা হাতছাড়া করতে রাজি ছিলাম না। তাই নিজেকে বোঝাই, ঠিকঠাক খেলে প্রতিপক্ষের থেকে পয়েন্ট কাড়তে হবে। তবে বেশি সময় লাগেনি। ড্যানিয়েল আগেই পয়েন্ট দিয়ে দিল।” শেষ পর্যন্ত ২৩-২১ ব্যবধানে গেম জেতেন তিনি।
[আরও পড়ুন: প্যারালিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে দাপট ভারতের, প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে ব্রোঞ্জ জিতলেন নিত্যশ্রী শিবন]
তবে প্রথমবার সোনা জয়ের তাৎপর্য অনুভব করতে পারছিলেন না নীতেশ। পদক গলায় ওঠার আগে কোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “আমার এখনও তেমন উত্তেজনা হচ্ছে না। আমি আগেও একই কথা বলেছি। সোনা জয়ের জন্য বাড়তি কোনও অনুভূতি এখনও আমার হয়নি। হয়তো যখন পদক গলায় পোডিয়ামে দাঁড়াব, জাতীয় সঙ্গীত বাজবে আর আমাদের তেরঙ্গা সবার উপরে উঠবে, তখন আমি বুঝতে পারব এই জয়ের অনুভূতিটা ঠিক কেমন!”
সোনা জয়ের অনুভূতিটা ঠিক কেমন, তা নিশ্চিতভাবেই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন নীতেশ।