অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: মাসখানেক পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। আজ, শুক্রবার হত পাকা দেখা। হবু স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছিল। বলেছিলেন, বাড়ি এসে অপেক্ষা করতে। তিনি সময়মতো পৌঁছে যাবেন। কিন্তু আর ফেরা হল না। পার্কসার্কাসে কনস্টেবলের গুলিতে দপ করে নিভে গেল রিমা সিংয়ের জীবনবাতি। মেয়ে আর কোনওদিন বাড়ি ফিরবেন না, বিশ্বাসই করতে পারছে না পরিবার। সংসারকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে আচমকা চলে গেলেন রিমা।
শুক্রবার দুপুরে পার্কসার্কাসে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চোডুপ লেপচার গুলিতে প্রাণ হারান রিমা। হাওড়ার পশ্চিম দাশনগরের ফকির মিস্ত্রি বাগানের বাসিন্দা ২৮ বছরের রিমা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বছর পাঁচেক আগে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একপ্রকার বাড়িতেই বসে বাবা অরুণ সিং। মা মীরা সিং গৃহবধূ। ২২ বছরের ভাই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পর বেকার। রিমা চেয়েছিলেন ভাইকে আরও লেখাপড়া করাতে। তাই কাজ করতে বারণ করেছিলেন। নিজে গ্র্যাজুয়েশনের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি করতেন। এই ফিজিওথেরাপি থেকে আয় দিয়েই চলত সংসার। দিদা সাবিত্রী সামন্তের দেখভালের দায়িত্বও ছিল রিমার উপরই। তাঁর আচমকা মৃত্যুতে যেন ভেসে গেল গোটা সংসার।
[আরও পড়ুন: HS Result 2022: মেধাতালিকায় তিন স্কুল থেকেই ৪০ জন, পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন]
দাশনগরের বাড়িতে খবরটা পৌঁছতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলে। সেই সময় রিমার বাড়িতেই ছিলেন তাঁর হবু স্বামী প্রবীর রায়। প্রথমটায় যেন বিশ্বাস করতেই পারছিলেন না। পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেয়ে টিভির পর্দায় দেখেন গোটা বিষয়টা। কিছুক্ষণ আগেই যাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি যে আর কোনওদিন ফিরবেন না, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে রামরাজাতলার বাসিন্দা প্রবীরের।
‘‘আমার মেয়েটা বেলা ১২টা নাগাদ হাসতে হাসতে বেরোল। জিজ্ঞেস করলাম, কখন ফিরবি? বলল, সন্ধেয় ফিরব। ও এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আমাদের হবু জামাইয়ের বাবা মারা গিয়েছে। তাই পাকা দেখার বিষয়টা পিছিয়ে গিয়েছিল। আজ বিয়ের দিন স্থির হওয়ার কথা ছিল। সেই জন্য প্রবীর এসেছিল।’’ কথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন রিমার মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা। কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতেই নেই তিনি। মুহূর্তের একটা ঘটনা গোটা পরিবারকেই যেন অনাথ করে দিল। রিমার পরিবারের অবস্থা দেখে শোকস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও।