সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয়া সংসদ ভবন পথচলা শুরুর কয়েকমাসের মধ্যেই বিতর্কে। বুধবারের আতঙ্কের পর প্রশ্ন উঠেছে সংসদ ভবন ও সাংসদদের নিরাপত্তা নিয়ে। ২০০১ সালের সন্ত্রাসবাদী হানার বর্ষপূর্তির দিন এই আতঙ্ক নিছক কাকতালীয়, না কি ঠান্ডা মাথার সন্ত্রাসবাদী হানা? উঠছে নানা প্রশ্ন। যার উত্তর খুঁজতে ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছে দিল্লি পুলিশ। মামলা রজু করা হয়েছে ইউএপিএ ধারায়। তাদের তদন্তের পরই মিলবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর।
তবে বুধবার দুপুরের আতঙ্কের কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনে চলে আসে হামলাকারীদের পরিচয়। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, ঘটনায় জড়িত মোট ছজন। প্রত্যেকেই হেফাজতে। গত চার বছর ধরে দিল্লি লাগোয়া গুরুগ্রামে হয়েছে বুধবারের নাশকতার ছক। স্থানীয় দুজনের সঙ্গে সেখানে উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার হিসার থেকে জড়িত আরও চারজন। এর আগে সংসদে এসে সবকিছু ছকে গিয়েছে তারা।
[আরও পড়ুন: ধোঁয়া দেখে হাত-পা হিম, চেপে ধরে মৃত্যুভয়! সংসদ হামলার বর্ণনায় বাংলার সাংসদ]
জানা গিয়েছে, যে দুজন দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে চেম্বারে নামে, তাদের নাম সাগর শর্মা ও ডি মনোরঞ্জন (৩৫)। সাগর থাকে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ে। মনোরঞ্জনের বাড়ি কর্নাটকের মহীশূরে। সংসদ চত্বর থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়। হরিয়ানার হিসারের নীলম দেবী (৪২) ও মহারাষ্ট্রের লাতুরের আমোল শিন্ডে (২৫) সংসদ চত্বরে স্মোক ক্যানিস্টার থেকে হলুদ রঙের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে স্লোগান দিচ্ছিল। এই চার জনই এসেছিল গুরুগ্রামের সাত নম্বর সেক্টরের ললিত ঝা নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। সন্ধের দিকে গ্রেপ্তার করা হয় এই গ্যাংয়ের ষষ্ঠ সদস্য ভিকি শর্মাকেও। বছর চারেক আগে সোশাল মিডিয়ায় একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলায় এই ছয় আততায়ী। আপাতত যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তারা কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়।
তবে পরিবার সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল নীলম। যখন তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই সময় তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি নীলম। আমি কোনও দলের সঙ্গে জড়িত নই। তবে আমাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। আজ যা হল, সেটা তারই প্রতিবাদ। স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক।” তার মা সরস্বতীদেবীর কথায়, “আমার মেয়ে বিএ, এমএ, এমফিল করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। পরীক্ষা বারবার দিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশা থেকে হয়তো এমনটা করে ফেলেছে।”
[আরও পড়ুন: নোটবন্দির বছরেও সংসদে তাণ্ডব যুবকের, তিনিও ছিলেন বিজেপি সাংসদের ‘অতিথি’]
যারা সংসদের দর্শক গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল, তাদের অন্যতম ডি মনোরঞ্জন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বাবা দেবরাজে গৌড়া বলছিলেন, “ও খুবই ভালো ও সৎ ছেলে। সমাজের জন্য ভাল কিছু করার ইচ্ছা ওর মধ্যে ছোট থেকেই রয়েছে। তার জন্য প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করতেও ও রাজি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় থেকে ও স্বামী বিবেকানন্দর বই পড়া শুরু করে। হয়তো সেখান থেকেই এই সব করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।” আশ্চর্যের বিষয় হল, সংসদ চত্বর থেকে ধৃত নীলম ও আমোলের কাছে কোনও পরিচয়পত্র ছিল না। কীভাবে কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই সংসদে ঢুকে আসতে পারে কেউ, উঠছে এই প্রশ্নও।