স্টাফ রিপোর্টার: তেলের দাম বাড়ায় নিজেদের মতো করে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে বেসরকারি বাস। পা দিলেই ১০ টাকা। কিন্তু ভাড়া বাড়েনি সরকারি বাসে। মনে করা হয়েছিল, তাতে যাত্রী হয়তো বাড়বে। কিন্তু হিসাব বলছে, দিনে গড়ে দেড় লক্ষ যাত্রী কমেছে সরকারি বাসে। যা দেখে চোখ কপালে পরিবহণ নিগমের কর্তাদের। করোনা কালের আগে যেখানে শহরে দিনে প্রায় আড়াই লক্ষ যাত্রী চড়তেন সিএসটিসির বাসে, সেই সংখ্যা এখন কমতে কমতে ১ লক্ষ ১০ হাজারে এসে ঠেকেছে। যে কারণে রোজগারও কমেছে অনেকটাই। শহরতলি-জেলার একাধিক ডিপো রয়েছে, তেলের অভাবে যেখান থেকে বাস বের করতেই কালঘাম ছুটছে ম্যানেজারদের।
নিগমের আধিকারিকরাই বলছেন, বাসের সংখ্যা আগের থেকে কমায় অনেক ক্ষেত্রেই স্টপেজে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আর তাই ধীরে ধীরে সরকারি বাসের থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন তাঁরা। যাত্রী কমছে হু হু করে। তাঁদের কথায়, তেলের দাম দু’বছরে ২৫ টাকার মতো বেড়েছে। অথচ ভাড়া বাড়েনি। নিগমের কোষাগারে আর্থিক অনটন সঙ্গী। এই অবস্থায় বাসের সংখ্যাও কমে গিয়েছে অনেক। দিনে প্রায় ২০০ বাস কমেছে। ফলে সময়ে বাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা। একইসঙ্গে লকডাউনের সময় প্রচুর মানুষ নিজস্ব গাড়ি, বাইক কেনায় বাসের যাত্রী কমার একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। আগে বাস চালিয়ে দিনে ৩২-৩৫ লাখ টাকা আয় হত। এখন রোজগার প্রায় ১০ লক্ষ টাকা কমেছে। তবে এসি বাসে যাত্রীসংখ্যা বাড়ায় যাত্রীসংখ্যার গড় অনুপাতে রোজগার অতটা কমেনি। না হলে মুখ থুবড়ে পড়তে হত সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোকে।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের ছবি দিয়ে ‘নতুন তৃণমূলে’র হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ দক্ষিণ কলকাতা, কী ব্যাখ্যা কুণাল ঘোষের?]
দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এখন নতুন ইটিএম (ইলেকট্রনিক টিকেটিং মেশিন) এসেছে সমস্ত বাসে। ফলে খুব সহজেই দিনে কত টিকিট কাটা হচ্ছে তার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। তাতেই যাত্রী কমার বহরটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আগে দুই ট্রিপ মিলিয়ে শহরে বাস চলত ৯০০-র মতো। এখন তা ৭০০ হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৬৭ টাকা ছিল ডিজেলের দাম, তা বেড়ে এখন ৯২ টাকা। কিন্তু সরকারি বাসের ভাড়া বাড়েনি। আর হিসাব মতো টিকিট বিক্রির টাকা থেকে তেলের দাম মেটাতে হয়। টিকিট বিক্রি কমায় আগের মতো অত বাসও তাই নামছে না। বসিয়ে রাখতে হচ্ছে গাড়ি। বসে থাকছেন ড্রাইভার-কন্ডাক্টররাও।
যাত্রীদের অভিযোগ, আগে যেমন ১৫ মিনিট বা ব্যস্ত সময়ে ৭-১০ মিনিটের ব্যবধানেও সরকারি বাস পাওয়া যেত কিছু রুটে, সেখানেও দুই বাসের ব্যবধান অনেক বেড়ে গিয়েছে। গতিতে ছোটে এবং যেখানে-সেখানে দাঁড়ায় না বলে সাধারণ মানুষ আগে সরকারি বাসই খোঁজেন। কিন্তু এখন তা এতটাই অনিয়মিত যে, তাঁদের যাতায়াতের জন্য বেসরকারি বাস বা বাইক ট্যাক্সির কথা ভাবতে হচ্ছে। পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, তেল থেকে টায়ার, বাসের যন্ত্রাংশ, এই সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু ভাড়া বাড়েনি। এভাবে চলতে থাকলে আরও বাস বসে যাবে।