shono
Advertisement

পাভলভের ১৬ ‘মানসিক রোগী’র নাম উঠল ভোটার তালিকায়

বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে ইভিএম-এর বোতাম টিপবেন কী করে? The post পাভলভের ১৬ ‘মানসিক রোগী’র নাম উঠল ভোটার তালিকায় appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:57 PM Jan 30, 2019Updated: 12:57 PM Jan 30, 2019

অভিরূপ দাস: খাতায় কলমে মানসিক রোগী। ঠিকানা মানসিক হাসপাতাল। অথচ নাম উঠেছে ভোটার তালিকায়! শুনে অবাক লাগছে! তবে সত্যিই এমনটা হয়েছে।

Advertisement

কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ষোলোজন আবাসিক পেয়ে গিয়েছেন নিজেদের নামে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র। যার দৌলতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্য কিছু রাজ্যে মানসিক হাসপাতালের রোগীরা আগে এই সুযোগ পেলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা প্রথম। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মানসিক ভারসাম্য ঠিক নেই এমন কেউ সঠিক বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে ইভিএম-এর বোতাম টিপবেন কী করে?

ঘটনা হল কাগজে কলমে মানসিক রোগীর তকমা থাকলেও ওঁরা কার্যত সুস্থ-স্বাভাবিক। পাভলভ কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ওঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বস্তুত ওঁদের হাসপাতালে থাকারও কথা নয়। কিন্তু বাড়ির লোকের হদিশ নেই। কারও পরিজন ভুয়া ঠিকানা লিখিয়ে গিয়েছেন। কাউকে ফিরিয়ে নিতে নারাজ স্বজনেরা। বারবার ফোন করলেও তাঁদের দেখা মিলছে না।

[এসডিএফ বিল্ডিংয়ে আগুন, আতঙ্কিত অফিসকর্মীরা সুরক্ষিতই]

ফলে আপাতত পাভলভই ওঁদের ঠিকানা। কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন হতভাগ্য মানুষগুলিকে যখন পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তখন অন্তত তাঁদের হাতে একটা অধিকার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করা। কেমন ছিল দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ? সুপার ডা. গণেশ প্রসাদ জানিয়েছেন “ধীরে ধীরে যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিতে গিয়েই অসুবিধায় পড়ি। দেখা যায় কারও পরিবার ভুল ঠিকানা দিয়ে গিয়েছেন। কারও বাড়ির লোক সরাসরি বলেছেন পাগলকে বসিয়ে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য নেই।” সমব্যথী সুপার ডা. গণেশ প্রসাদ অগত্যা নিজেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। পাশে ছিলেন রত্নাবলি রায়ের মতো সমাজকর্মীরা। রত্নাবলী জানিয়েছেন, “লড়াইয়ের সবে শুরু। অনেকেই ভাবতেন মানসিক রোগীদের আবার ভোটাধিকার কীসের? সেই চিন্তায় একটা আঘাত আনা গেল। আজ ষোলোজনের ভোটার কার্ড এসেছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও চল্লিশ জনের আসবে।” কার্যত সুপারের চেষ্টাতেই ষোলোজন চালচুলোহীন পেয়ে গিয়েছেন সচিত্র পরিচয়পত্র। আদমশুমারিতে কেউ তাঁদের মাথা না গুনলেও এবার তাঁদের ভোট গুনতে হবে ইভিএমে।

একমুখ দাড়িগোঁফ, জট পড়া চুল এখন সাফসুতরো। দীর্ঘ চিকিৎসায় দিব্যি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অবসর সময়ে ছবি আঁকেন। গল্প করেন। এমনই ষাটজন সুস্থ হয়ে ওঠা মানসিক রোগীর হয়ে ভোটার কার্ডের আবেদন করেছিল প্যাভলভ কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে ষোলোটি গৃহীত হয়েছে। সোমবারই ষোলোজনের ভোটার কার্ড এসে গিয়েছে পাভলভ হাসপাতালে। যুগান্তকারী এই পদক্ষেপে খুশি মানবাধিকার কর্মীরাও। সুজাত ভদ্র জানিয়েছেন, “গণতন্ত্র প্রচারিত করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই। যাঁরা ভোট দিতে ইচ্ছুক সকলের ভোটার কার্ড হোক এমন দাবিই আমরা জানিয়ে আসছি।” আর বাড়ি ফেরার কথা? সুজাতর কথায়, “এদের পরিবার অত্যন্ত অমানবিক। সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা বাড়িয়ে ফিরিয়ে নিচ্ছেন না তাঁরা ভুল কাজ করছেন। এই মানুষগুলোর মানসিক পরিচর্যার দরকার। বাড়ির লোকই তা দিতে পারে।”

দামামা বেজে গিয়েছে লোকসভা ভোটের। দেশ চালাবে কে? এমন সিদ্ধান্তের শরিক হতে পেরে খুশি তাঁরাও। ঘর থেকেও যাঁরা বেঘরে। পাড়ায় একসময় সবাই যাকে ভবাপাগলা বলে খেপাত। আজ পাভলভে সুস্থ হয়ে তিনিই ভবেন হালদার (নাম পরিবর্তিত)। বলেছেন, “আমাদের তো কোনও পরিচয় নেই। সবাই এক সময় পাগল বলে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের সাহায্যে আমরা নতুন জীবন পেয়েছি। সুপার আর সমাজকর্মীরা আমাদের জন্য যা করেছেন সে ঋণ শোধ করার নয়।”

The post পাভলভের ১৬ ‘মানসিক রোগী’র নাম উঠল ভোটার তালিকায় appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement